রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড, রিজার্ভ ছাড়াল ৩১ বিলিয়ন ডলার

চলতি অর্থবচে রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিহাস গড়ল ৩০.২১ বিলিয়ন ডলারে, যার ফলেই জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলারে।
২০২৪–২৫ অর্থবচে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স প্রবাহ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে এনে দিয়েছে মোট ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, জুনের শেষে দেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলারে । IMF পদ্ধতি (BPM6) অনুযায়ী নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬.৬৬ বিলিয়ন ডলারে
ঘটনা/মূল তথ্য
- ২০২৪–২৫ অর্থবচে রেমিট্যান্স প্রবাহ: ৩০.২১ বিলিয়ন ডলার (জুন ২৯ পর্যন্ত) — দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ
- জ্ঞানসম্মতিখাত অনুযায়ী, জুন মাসেই প্রবাহ হয়েছে প্রায় ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ।
এই প্রবাহ রিজার্ভ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং আমদানির ব্যয় সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতির বিশ্লেষণ
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পিছনের কারণ
- সরকারি প্রণোদনা (২.৫% প্রণোদনা ভাতা) ও ব্যাংক-কারেন্সি লেনদেনে নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
- ‘হুন্ডি’ নেটওয়ার্কে কড়াকড়ি আর ব্যাংকিং অঙ্গনে পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধির ফলে প্রবাসীরা আইনুগত পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহী হয়েছে ।
- ঈদের সময় রেমিট্যান্সে প্রভাবশালী বৃদ্ধি (জুনে ৭.১% বৃদ্ধি) সহ বছরভর প্রবাহ অব্যাহত থেকেছে
রিজার্ভে প্রভাব ও বহিঃমুখী চাপ
- গ্রস রিজার্ভ ৩১.৩১–৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলারের দিকে পৌঁছেছে, যা মার্চ ২০২৩–এর পর সর্বোচ্চ স্তর
- IMF-এর BPM6 পদ্ধতিতে নিট রিজার্ভ ২৬.৩২–২৬.৬৬ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২৩ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ
- রিজার্ভ থাকার ফলে আমদানি ও বৈদেশিক দেনা মিটাতে সহায়ক থাকবে।
বহিঃসাহায্য ও ঋণ বিষয়ক অবদান
- IMF, ADB, AIIB, JICA ও বিশ্বব্যাংক থেকে এ বছর প্রায় ৪–৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল এসেছে, যা রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে
আন্তর্জাতিক তুলনা ও প্রভাব
- রেমিট্যান্স প্রবাহে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্বে শীর্ষে, ও দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম প্রাপক ।
- পূর্বের রেকর্ড: করোনাকালে ২০২০–২১ অর্থবচে ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার; ২০২১ থেকে ধারাবাহিক বৃদ্ধি।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষণ
সিপিডির এক অর্থনীতি বিশ্লেষক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন,
“রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির প্রধান কারণ সরকারি প্রণোদনা এবং ব্যাংকিং দৃঢ়তা। তবে আসল চ্যালেঞ্জ হল এই প্রবাহ বজায় রাখা ও হুন্ডি বন্ধ রাখা।”
তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, সরকারকেও প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানে নজর দিতে হবে।
উপসংহার ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এখন অনেকটা দৃঢ় হয়েছে। তবে আগামীর চ্যালেঞ্জ হল — রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রাখা, হুন্ডি মোকাবিলা ও প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা।
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লাগবে সুদৃঢ় কর্মকৌশল এবং বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা অনুযায়ী রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাও সুগঠিতভাবে করতে হবে।
তবে দেখা যাক, আগামী অর্থবচে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যায় কীনা — এবং বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা কতটা নিশ্চিত হয়?
এম আর এম – ০১৩০, Signalbd.com