অর্থনীতি

এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনের অবসান, কাজে ফিরলেন সবাই

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘ আন্দোলনের পর আজ সোমবার সকাল থেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান এনবিআর সংস্কার নিয়ে তাদের ধর্মঘট ও কর্মবিরতি শেষ করে তারা নিয়মিত অফিস ও শুল্ক স্টেশনে ফিরে শুল্ক আদায় ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টার দিকে দেশের সব স্থলবন্দর, শুল্ক স্টেশন ও এনবিআরের অন্যান্য দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত হয়ে নিয়ম মাফিক কাজ শুরু করেছেন। যদিও পুরোপুরি কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসেনি, তবুও বেশিরভাগ কর্মী নিজ নিজ দায়িত্বে মনোযোগ দিয়েছেন।

দেশজুড়ে কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউস, ভোমরা, বুড়িমারী, সোনা মসজিদ, আখাউড়া সহ দেশের সব প্রধান শুল্ক স্টেশন ও স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির কাজ এখন স্বাভাবিক হয়েছে। শুল্ক-কর আদায় কার্যক্রমও পুনরায় শুরু হয়েছে।

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআর কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, “সকাল থেকে আমরা সবাই নিজের ডেস্কে ফিরে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছি। অবশ্য গত কয়েক দিনের আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিত নিয়ে অফিসেও আলোচনা হচ্ছে।”

বদলির আতঙ্ক ও যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা আন্দোলনের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বদলির আতঙ্ক ও অবাঞ্ছিত পদস্থাপনকে উল্লেখ করেছেন। গত দেড় মাস ধরে এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছিল।

তারা চাইছিলেন, এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ — রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ — গঠনের পাশাপাশি রাজস্ব খাতে কাজ করা কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে পদায়ন করতে হবে। এর মাধ্যমে প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নে সুষ্ঠু সংস্কার আনতে হবে।

সরকারি পদক্ষেপ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতা

সরকার গত ১২ মে একটি অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে। কিন্তু এনবিআরের কর্মীরা এই পরিবর্তনে কিছু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি ও অন্যায়ের অভিযোগ তোলেন। তারা এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগ দাবি করেন।

গত কয়েক দিনে বিশেষ করে শনিবার ও রবিবার দেশজুড়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েন। এরপর দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা সরাসরি উদ্যোগ নিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করেন। একটি প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন, যা পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের সাথেও বৈঠকে রূপ নেয়।

গতকাল রাতে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী ও এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলেমিশে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়ে এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।

এনবিআরের ভবিষ্যত ও কর ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন

এনবিআরের সংস্কারে এই আন্দোলনকে বড় একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এনবিআরকে আরও আধুনিক ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের মধ্যে ন্যায্য ও সুশৃঙ্খল পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

কর নীতি ও কর আদায়ের কাজ আলাদা বিভাগে বিভক্ত করার ফলে কর ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর ও দক্ষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এর জন্য এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংস্কারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও আন্তরিক উদ্যোগ দরকার।


এনবিআরের দীর্ঘ আন্দোলনের পর আজ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়ে শুল্ক আদায় ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছেন। এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কার ও পদায়নে স্বচ্ছতা দাবিতে চলা আন্দোলন শেষ হয়েছে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়েছে এবং এনবিআরের ভবিষ্যত উন্নয়নে নতুন বিভাগ গঠন করা হয়েছে। এখন সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে এনবিআরের সুষ্ঠু ও দক্ষ কর ব্যবস্থাপনার দিকে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button