অর্থনীতি

২১ দিনে প্রবাসী আয় এলো ২৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা

চলতি জুন মাসের প্রথম ২১ দিনেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৯৮ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। প্রবাসীদের এই অব্যাহত আয়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার আরও মজবুত হচ্ছে।

২০২৫ সালের জুন মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে এসেছে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠিয়েছেন প্রায় ১৯৯ কোটি ডলার, যা টাকায় দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৪৬৫ কোটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এটি চলতি অর্থবছরের অন্যতম শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ।

রেমিট্যান্সের বিস্তারিত চিত্র 

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনের প্রথম ২১ দিনে:

  • বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সর্বোচ্চ ১৩০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।
  • রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পেয়েছে ৪২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার।
  • বিশেষায়িত ব্যাংক পেয়েছে ২৫ কোটি ৫ লাখ ডলার।
  • বিদেশি ব্যাংকের শাখা থেকে এসেছে আরও ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে, যার পরিমাণ ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এরপর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে এসেছে ২৫ কোটি ৫ লাখ, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৭ কোটি ২৩ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ১১ কোটি ৮৬ লাখ এবং রূপালী ব্যাংক থেকে এসেছে ১০ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

রেমিট্যান্সে আগের মাসগুলোর তুলনা 

রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা বিগত কয়েক মাসেও ছিল ইতিবাচক:

  • মার্চ ২০২৫: সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স — ৩৩০ কোটি ডলার
  • এপ্রিল ২০২৫: দ্বিতীয় সর্বোচ্চ — ২৭৫ কোটি ২০ লাখ ডলার
  • মে ২০২৫: ২৯৭ কোটি ডলার, যা আবার নতুন রেকর্ড তৈরি করে

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৯.৫০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬.৭% বেশি

প্রবাসী আয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব 

রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকাশক্তি। এই প্রবাহ সরাসরি:

  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করে
  • মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
  • দেশের আমদানি সক্ষমতা বাড়ায়
  • গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখে

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের স্থিতিশীল রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনীতিকে বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।

কেন বাড়ছে রেমিট্যান্স

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে:

  1. বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা
  2. ডলার-টাকার হারে বাড়তি সুবিধা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা)
  3. হুন্ডি বন্ধে সরকারের কড়া নজরদারি
  4. বিশেষ উৎসব কেন্দ্রিক অতিরিক্ত আয় পাঠানো
  5. মোবাইল ব্যাংকিং ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ হওয়া

“রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার আরও শক্তিশালী হচ্ছে”—বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা

উপসংহার 

প্রবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সময়োপযোগী নীতিমালার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে দেখা যাচ্ছে ইতিবাচক ধারা। চলতি মাসে প্রাপ্ত ২৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করছে। প্রশ্ন রয়ে যায়—এই ধারাবাহিকতা কি সামনের মাসগুলোতেও বজায় থাকবে?
এম আর এম – ০০১০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button