অর্থনীতি

নতুন মাত্রায় সঞ্চারিত দেশের মৌসুমি ফলের স্বস্তির বাতাস দাম কমেছে

দেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের ফলের বাজারে নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে। আম, কাঁঠাল, লিচু, লটকন, পেয়ারা, আনারস, ড্রাগন ফলসহ বহু দেশীয় মৌসুমি ফলের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ফলের প্রাচুর্য ও দাম উভয় ক্ষেত্রে সুষম অবস্থা তৈরি হয়েছে। শুধু দেশীয় ফল নয়, আমদানিকৃত আপেল, মাল্টা, আঙুরের দামও কমে স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতাদের জীবনে।

দেশে দেশীয় ফলের প্রাচুর্য, দাম কমেছে বহুগুণে

রাজধানীর উত্তর গোড়ান বাজারের ফল বিক্রেতা আব্দুর রহিম জানান, “বাজারে বর্তমানে আম, কাঁঠাল, লিচু, লটকন, পেয়ারা, আনারস, ড্রাগনসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের প্রাচুর্য অনেক বেড়ে গেছে। ফলে ডাবের মতো কিছু ফলের চাহিদা কমেছে, এবং সেজন্যই দামও কমে গেছে।”

মাঝারি আকারের ডাব এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে এক মাস আগেও ১৫০ টাকার নিচে ডাবের দেখা পাওয়া যেত না। এই পরিবর্তন ডেঙ্গু ও করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির মধ্যেও ঘটেছে যা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

তাছাড়া, দেশের বিভিন্ন ফলের বাজারে এখন আমের কেজি দাম সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ টাকা, উন্নত মানের আম ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে আমের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে, যা ক্রেতাদের জন্য আনন্দের খবর।

আমের বৈচিত্র্যে রাজধানীর বাজার সিক্ত

ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমের প্রজাতি বৈচিত্র্য লম্বা তালিকা তৈরি করেছে। ল্যাংড়া, আম্রপালি, বারি-৪, হাঁড়িভাঙাসহ অন্তত ৮ থেকে ১০ প্রজাতির আম পাওয়া যাচ্ছে, যার দাম বাজারে ৬০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে ভিন্ন।

কাঁঠালের দামে ব্যাপক পরিবর্তন

ঈদের পর থেকে কাঁঠালের দামও কমে গেছে। আগে যেখানে ১০০ টাকার নিচে কাঁঠাল পাওয়া দুষ্কর ছিল, এখন তা ৬০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বড় কাঁঠালের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ধরা দিয়েছে।

মানিকনগর বাজারের বিক্রেতা রাইসুল রহমান বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার কাঁঠালের দাম অনেক কম। আমাদের গাজীপুরের বাগান থেকে তোলা কাঁঠাল এখন পুরোপুরি পেকে গেছে, তাই বেশি দিন গাছে রাখা যায় না, বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে।”

আনারস, ড্রাগন, লটকনসহ অন্যান্য দেশীয় ফল

আনারস, ড্রাগন, লটকন, জাম, লিচু, পেয়ারা, আমড়া ইত্যাদি দেশীয় ফল বাজারে সহজলভ্য। আনারসের ছোট ছোট হালি প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা এবং বড় আনারস ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লটকনের দাম কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং ড্রাগনের দাম কমে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় নেমেছে। এক মাস আগে ড্রাগন বিক্রি হত ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।

লিচু: দাম অপ্রতিরোধ্য, চাহিদা প্রবল

লিচুর দাম তুলনামূলক বেশি, বিশেষ করে দিনাজপুরের লিচু প্রতি শতকে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের মতে, লিচু এই মরশুমে দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম কমেনি। গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর দাম অনেক বেশি, যা ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদার প্রমাণ বহন করছে।

বিদেশি ফলের দাম ও চাহিদা কমেছে

দেশীয় ফলের প্রাচুর্যে বিদেশি ফলের বাজারে চাহিদা কমেছে এবং সঙ্গে দামও নেমেছে। গালা আপেল বর্তমানে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে আগেও দাম ছিল ৩২০ টাকা। সবুজ আপেল ও নাশপাতির দামও ৩০০ থেকে ৩২০ টাকার মধ্যে রয়েছে, যা আগের ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকার থেকে কম। মাল্টার দামও কমে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় নেমেছে।

রামপুরা বাজারের ফল বিক্রেতা মো. রুবেল জানান, “বর্তমানে মানুষ সকালের নাশতায় দেশীয় ফল বেশি পছন্দ করছে। আত্মীয় বাড়ি বা রোগী দেখতে যাওয়ার সময়ও তারা এসব ফল নিয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় ফল উৎসব হচ্ছে, যা বিদেশি ফলের চাহিদা কমিয়েছে।”

বাজারে ফলের দাম ও সরবরাহের সামগ্রিক অবস্থা

বর্তমান ফল বাজারে দেশীয় ফলের প্রচুর সরবরাহ এবং দাম কমার ফলে ক্রেতাদের অর্থনৈতিক বোঝা অনেকটা কমেছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফল যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস ও পেয়ারা বাজারে ভরপুর রয়েছে। পাশাপাশি, ড্রাগন ফলের সরবরাহ বেড়ে দাম কমলেও লিচুর দাম এখনও তুলনামূলক বেশি।

দেশীয় ফলের উন্মুক্ত বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়ে বিদেশি ফলের প্রতি ক্রেতাদের মনোযোগ কমেছে, যা স্থানীয় ফল উৎপাদন ও বিপণনের জন্য খুবই ইতিবাচক।

  • দেশীয় ফলের প্রাচুর্যে বাজার ভরপুর, কমেছে দাম: আম, কাঁঠাল, লিচু থেকে আনারস পর্যন্ত সবই সুলভ
  • ঢাকা বাজারে মৌসুমি ফলের সরবরাহ বৃদ্ধি, বিদেশি ফলের চাহিদা কমেছে
  • গ্রীষ্মের ফলের দাম কমেছে, ক্রেতাদের মুখে হাসি
  • আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস: দেশের মৌসুমি ফলের দাম ও সরবরাহের বিস্তারিত প্রতিবেদন

ঢাকার ফলের বাজারে দেশীয় মৌসুমি ফলের প্রাচুর্য বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা এখন কম মূল্যে পুষ্টিকর ও তাজা ফল উপভোগ করতে পারছেন। আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, পেয়ারা, ড্রাগন ফলের সরবরাহ বাড়ায় বিদেশি ফলের চাহিদা কমেছে, যার ফলে বিদেশি ফলের দামেও পতন এসেছে। বাজারে এই পরিবর্তন ক্রেতাদের জন্য সুখবর হিসেবে ধরা পড়েছে এবং দেশের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আপনি যদি নতুন গ্রীষ্মকালীন ফল কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন, এখনই বাজারে গিয়ে দেশীয় ফলের মধুর স্বাদ উপভোগ করার সেরা সময়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button