জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘোষণা করেছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা কারো সঙ্গে জোট না করে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, ‘শাপলা কলি’ প্রতীকেই এদের সমস্ত প্রার্থী মাঠে নামবে।
ঘোষণা ও পার্টির সিদ্ধান্ত
নাহিদ ইসলাম বলেন,
“আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি শক্তিশালী এবং স্বতন্ত্র উপস্থিতি রাখতে চাই। তাই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিচ্ছি। আমাদের প্রতীক ‘শাপলা কলি’, যা জনগণের কাছে পরিচিত এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।”
এনসিপি প্রধান সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, নির্বাচন কমিশন নতুন কিছু প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাদের দল শাপলা কলি প্রতীকের সঙ্গে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইছে, যাতে নির্বাচনী মাঠে প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রার্থিতা প্রক্রিয়া
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তারা দ্রুত এনসিপির অফিসে এসে প্রার্থিতা জমা দিতে পারবেন। দল ইতিমধ্যেই প্রার্থী নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। আহ্বায়ক ও মুখ্য সমন্বয়কের কাছে ভোটার এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, “শাপলা কলি প্রতীক আমাদের জন্য শক্তিশালী প্রতীক। দেশবাসীর কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর আমরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছি। প্রতিটি আসনে আমাদের প্রার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।”
রাজনৈতিক পটভূমি ও পার্টির অবস্থান
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটি রাজনৈতিক জোট বা বড় কোনো দলের সঙ্গে অংশীদারিত্ব না করে স্বাধীনভাবে নির্বাচনী মাঠে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান,
“ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও চাঁদাবাজি-মুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ আমরা চাই। তাই বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে কোন জোটে আমরা নেই। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র দেশবাসীর জন্য একটি স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিশ্চিত করা।”
আইন ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা
নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করেছে। এনসিপি প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ বেছে নিয়েছে। দলটি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে, যাতে প্রতীক বরাদ্দে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ প্রভাবিত করতে না পারে।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর সংশোধনী নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে এককভাবে আশ্বাস প্রদান করা রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার পরিপন্থী।”
প্রভাব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপি যে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে, তা নির্বাচনী মানচিত্রে নতুন শক্তি হিসেবে প্রতিফলিত হবে। শাপলা কলি প্রতীক ভোটারদের কাছে দলের পরিচয় বহন করবে এবং নির্বাচনী প্রচারণায় সুবিধা দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নতুন প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীশূন্যতা এনসিপিকে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমানভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। নির্বাচনের দিন ভোটাররা সহজেই প্রতীক চিনে দলকে ভোট দিতে পারবে।
পূর্বের নির্বাচনী উদাহরণ
বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদের আওতায় পরিচালিত হয়। নতুন দলের স্বতন্ত্র প্রতীক বরাদ্দ নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক করে।
গত দশকে বেশ কয়েকটি নতুন দল এই নিয়মে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দ এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রক্রিয়া তাদের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ও নেতাদের মন্তব্য
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাশিদুল ইসলাম বলেন, “শাপলা কলি প্রতীক ভোটারদের কাছে দৃশ্যমানতা ও স্বীকৃতি দেয়। এটি দলের পরিচয় এবং ভোটারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।”
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা চাই দেশের মানুষেরা সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ভোট দিতে পারে। স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং শক্তিশালী প্রতীক জনগণের আস্থা বাড়াবে। আমাদের লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘শাপলা কলি’ প্রতীক নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলের প্রস্তুতি, প্রার্থিতা প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনী কৌশল ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বতন্ত্র প্রতীক এবং স্বাধীন প্রার্থীশূন্যতার কারণে এনসিপি ভোটারদের কাছে একটি নতুন রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। নির্বাচনী মাঠে এদের উপস্থিতি নির্বাচনের গতিপথ এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
এম আর এম – ২০৯০,Signalbd.com



