আঞ্চলিক

উত্তরায় র‍্যাব পরিচয়ে নগদ এজেন্টের কোটি টাকা ছিনতাই

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় র‍্যাব পরিচয় দিয়ে নগদ এজেন্টদের কাছ থেকে এক কোটি ১৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের পাশে। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া পরিকল্পিত এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী এবং উদ্বিগ্ন নগদ এজেন্টদের সম্প্রদায়।

ঘটনাক্রম: পরিকল্পিত অপারেশন

সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, একটি কালো মাইক্রোবাস থেকে নেমে আসা ছয়-সাতজন ব্যক্তি র‍্যাবের পোশাক ও ‘র‍্যাব’ লেখা জ্যাকেট পরে নগদ এজেন্টদের পথরোধ করে। তাদের হাতে অস্ত্রও ছিল। এই ছদ্মবেশী দলটি নগদ এজেন্টদের থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগসহ দুজনকে জোরপূর্বক গাড়িতে তোলে। অন্য একজন এজেন্ট পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তাকে পরে ধরা হয়। অপহরণের প্রায় ৩০ মিনিট পর ছিনতাইকারীরা দুই ভুক্তভোগীকে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের একটি রাস্তার পাশে ফেলে যায়।

এজেন্টদের ভাষ্য ও তদন্তের অগ্রগতি

নগদ ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এম আর করপোরেশনের মালিক মো. তারেকুজ্জামান বলেন, “এই টাকা ব্যাংক এবং সিআরএম (ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন) জমা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আমাদের যারা ছিল, তারা বহুদিন ধরে কাজ করছে—সবাই ট্রাস্টেড স্টাফ।”

তিনি আরও জানান, ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে রাস্তায় ঘটে এবং এর পেছনে কারও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে তিনি সন্দেহ করছেন। ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ সক্রিয় তদন্তে নামে। ইতোমধ্যে নগদ কোম্পানির চারজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

পুলিশের অবস্থান ও প্রাথমিক তদন্ত

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, “র‍্যাব লেখা জ্যাকেট পরা, কটি পরিহিত কিছু ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে। তারা নগদ এজেন্টদের বাধা দিয়ে, একজনকে ধাওয়া করে ধরে এবং তিনজনকে কালো মাইক্রোবাসে তোলে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি অত্যন্ত পরিকল্পিত ও পেশাদার কায়দায় সংগঠিত হয়েছে। ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।”

সন্দেহের তালিকায় অফিসের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরাও

পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ শুরু করেছে ছিনতাইয়ের রহস্য উদ্ঘাটনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে, এত বড় অঙ্কের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা হঠাৎ করে হতে পারে না। এর পেছনে থাকতে পারে ভেতরের কেউ, যে অভিযানের সময় ও পথের খবর ছিনতাইকারীদের জানিয়েছে।

ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের কিছু কর্মকর্তাকেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে বলে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

নগদ কোম্পানির নিরাপত্তা প্রটোকলে প্রশ্ন

এ ঘটনার পর নগদ কোম্পানির নিরাপত্তা প্রোটোকল নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এত বড় অঙ্কের নগদ অর্থ সাধারণ রাস্তায়, বিশেষ নিরাপত্তা ছাড়াই পরিবহন করা কতটা সঠিক ছিল তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন নগদ এজেন্টরা। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, নগদ পরিবহনের সময় অবশ্যই প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষী, আর্মড এসকর্ট এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম থাকা উচিত।

এলাকাবাসীর উদ্বেগ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

এলাকাবাসীরা বলছেন, দিনের আলোয় এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা রাজধানীর মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সত্যিই র‍্যাবের অপারেশন চলছে। কিন্তু পরে বুঝতে পারি এটি ছিনতাই ছিল।”

র‍্যাবের প্রতিক্রিয়া

র‍্যাবের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটি আমাদের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত একটি অপরাধ। এ ধরনের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা পুলিশকে তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতা করছি এবং অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করতে প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।”

শেষ কথা

রাজধানীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে দিনের বেলায় র‍্যাব পরিচয়ে কোটি টাকার ছিনতাই নিঃসন্দেহে আতঙ্কজনক। সিসিটিভি ফুটেজ থাকায় পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করতে ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করছে। তবে এই ঘটনার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নগদ পরিবহনের পদ্ধতি পুনর্বিবেচনার দাবি উঠেছে সর্বমহলে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button