মে মাসে কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাত ভালো করেছে, নির্মাণে অগ্রগতি নেই

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মে মাসে এক বিরাট ধাক্কা লেগেছে না বরং কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাত ভালো উন্নতি করেছে। তবে নির্মাণ খাত সেই গতিশীলতায় পিছিয়ে গেছে এবং গত মাসের তুলনায় কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। সামগ্রিকভাবে দেশে অর্থনীতি কিছুটা এগিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
পিএমআই সূচকে অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি
মে মাসের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) প্রকাশ করেছে যে, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের গতিপ্রকৃতি কী রকম ছিল। পিএমআই একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যা শিল্প ও ব্যবসার পরিবেশ বুঝতে সাহায্য করে। এটি প্রতি মাসে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ প্রকাশ করে থাকে।
কৃষি ও উৎপাদনে দৃঢ় সম্প্রসারণ
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও সিইও মাসরুর রিয়াজ বলেন, “মে মাসে বিশেষত রপ্তানি নির্ভর উৎপাদন খাত ও কৃষি খাতে চমৎকার গতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে কৃষি ও তার সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতিতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে।”
কৃষি খাত টানা অষ্টম মাসে সম্প্রসারণের পথে আছে এবং গতিময়তার দিক দিয়ে তা গত মাসের তুলনায় আরও উন্নত। উৎপাদন খাত টানা নবম মাসে সম্প্রসারণের মধ্যে রয়েছে এবং গতির দিক থেকেও আগের চেয়ে বেশ দ্রুত এগিয়েছে।
নির্মাণ খাতে স্থবিরতা
অন্যদিকে নির্মাণ খাত গত ছয় মাস ধরে সম্প্রসারণের পথে থাকলেও মে মাসে কোনো অগ্রগতি বা পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ, নির্মাণ খাত গত মাসের স্থিতিতে আটকে রয়েছে।
সেবা খাতের ধারাবাহিক উন্নতি
সেবা খাত টানা অষ্টম মাসে সম্প্রসারণ দেখিয়েছে এবং গতিময়তার দিক থেকে গত মাসের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। তবে নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের সূচক সংকোচনের মধ্যে রয়েছে।
পিএমআই স্কোরে বাংলাদেশের অগ্রগতি
মে মাসে বাংলাদেশের সার্বিক পিএমআই স্কোর এপ্রিলের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫৮.৯ এ উন্নীত হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির দ্রুত সম্প্রসারণের প্রমাণ দেয়। ৫০-এর উপরে যে কোন পিএমআই মান অর্থনীতির সম্প্রসারণ নির্দেশ করে, আর ৫৮.৯ মান যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।
পিএমআই সূচক ও অর্থনীতি
পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) অর্থনীতির দ্রুত পরিবর্তন বুঝতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রধানত নতুন অর্ডার, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, সরবরাহের গতি এবং মূল্য পরিবর্তনের মাধ্যমে হিসাব করা হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সূচক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে কারণ এটি রপ্তানি, উৎপাদন ও সেবাখাতের অবস্থা দ্রুত বোঝায়। তাই পিএমআইতে কৃষি ও উৎপাদন খাতের ভালো ফলাফলের অর্থ হলো দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক সাড়া রয়েছে।
কৃষি খাতের প্রসার: দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড
বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ। কৃষিখাত দেশের জিডিপির বড় অংশ গঠন করে এবং জনসংখ্যার বড় অংশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। তাই কৃষি খাতে ভালো উন্নতি মানেই দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হচ্ছে।
মে মাসে কৃষিক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়ার পেছনে রয়েছে মৌসুমী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নত সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে চাহিদার বৃদ্ধি। এতে কৃষি পণ্য রপ্তানি বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অর্জনও ভালো হয়েছে।
উৎপাদন খাত: রপ্তানিতে নতুন গতি
রপ্তানি নির্ভর উৎপাদন খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়ায় দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পিএমআই রিপোর্ট অনুসারে, উৎপাদন খাতে গতির সুস্পষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে যা নবম মাস টানা সম্প্রসারণ নির্দেশ করে।
এই উৎপাদন খাতের অগ্রগতির ফলে দেশীয় কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।
নির্মাণ খাতের অগ্রগতি রোধ
অন্যদিকে, নির্মাণ খাত দীর্ঘদিন স্থবির থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ঋণের স্বল্পতা, এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতা। নির্মাণ খাত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সরাসরি বহু মানুষের কর্মসংস্থান ও অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে নির্মাণ খাতের অগ্রগতি বন্ধ থাকায় অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এই খাতকে গতিশীল করার জন্য।
সেবা খাতের অবস্থা ও ভবিষ্যত
সেবা খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মে মাসে সেবা খাত ভালো সম্প্রসারণ দেখিয়েছে যা গত অষ্টম মাসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। তবে নতুন ব্যবসা এবং কর্মসংস্থান সূচক কিছুটা সংকোচনে রয়েছে যা চিন্তার কারণ।
ডিজিটাল সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নতি দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই খাতের সম্প্রসারণ দেশের নগরায়ন, আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থান শক্তিশালী করে।
মে মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতে ভালো উন্নতি করলেও নির্মাণ খাত স্থবির রয়েছে। সামগ্রিক পিএমআই স্কোরে অর্থনীতি দ্রুত সম্প্রসারণের ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও, কিছু খাতে স্থবিরতা অর্থনীতির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের উচিত এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে অর্থনীতিকে আরও গতিশীল এবং টেকসইভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ জন্য কৃষি ও উৎপাদনের মতো খাতগুলোকে সমর্থন দিয়ে, নির্মাণ খাতে প্রয়োজনীয় নীতিগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।