অর্থনীতি

রাজধানীর বাজার এখনো ভীড়হীন, শাকসবজি ও মাছের সরবরাহ কম

ঢাকা — কোরবানির ঈদের তিন দিন পার হওয়ায় রাজধানীর প্রধান কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি এখনও জমেনি। বিশেষ করে কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, ক্রেতা হাতে গোনা। এর ফলে বাজারের পরিবেশ একদম শান্ত। পাশাপাশি শাকসবজি, মাছ ও অন্যান্য তাজা পণ্যের সরবরাহও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। দামও এখন কিছুটা কমেছে।

মনির হোসেনের গল্প — ১৫ বছর ধরে কারওয়ান বাজারে কাজ

তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ির বাসিন্দা মনির হোসেন, যিনি ১৫ বছর ধরে কারওয়ান বাজারে একটি লোহালক্কড়ের দোকানে কাজ করেন, বলেন, ‘বাজার এখনও আগের মতো জমেনি। এই সময়ের পণ্যের দাম একটু কম থাকে, তাই একটু দেখে কিছু কিনে নিলাম। আমার মাসিক আয় ২৫-৩০ হাজার টাকা, যার মধ্যে বাসার ভাড়া ৭ হাজার টাকা। বাকি টাকায় চারজনের সংসার চালাই।’

ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় সরবরাহও কম

কারওয়ান বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ পরবর্তী সময় হওয়ায় ক্রেতা কম থাকায় পণ্যের সরবরাহও কমানো হয়েছে। পটোল, বেগুন, করলা, ঢ্যাঁড়স, বরবটি সহ বেশিরভাগ সবজি এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকায় বিক্রিও কম হচ্ছে।

নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতারা এখনো বাজারে

বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতাই নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাঁদের মধ্যে অনেকে জানান, ঈদের সময় বাসায় ফ্রিজ না থাকায় প্রতিদিনই বাজারে আসতে হয়। এই সময় বাজারে আসার কারণ হচ্ছে পণ্যের দাম কিছুটা কম থাকা।

রাজধানীর অন্য বাজারেও অবস্থা একই

তেজগাঁওয়ের পাশাপাশি রাজধানীর আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। শুধু কিছু সবজি, মাছ ও মুরগির দোকান খোলা। ঈদের আগে শসা, টমেটো, গাজর প্রভৃতির দাম বৃদ্ধি পেয়েছিলো, এখন তা আবার কমেছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ঈদের আগ পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হলেও ঈদের পর থেকে বেচাকেনা কমে গেছে।

ব্যবসায়ীদের ছুটি, বাজার ধীরে ধীরে সচল হবে

অর্থাৎ, প্রতিবছর ঈদের পর বাজারে এমনটা ঘটে। অনেক ব্যবসায়ী এখন ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন। আগামীকাল থেকে বাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটির কারণে এখনও অনেক মানুষ ঢাকায় ফিরেননি, তাই বাজারে ভিড় কম। কাল থেকে বাজারের সরবরাহ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাছের চাহিদা কম, দামও কমছে

কারওয়ান বাজারের কামারপট্টি এলাকায় মাছ বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদের সময়ে মাছের চাহিদা কম থাকে। এই বাজারে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় বেশি থাকে, যারা কোরবানি দেন না। তাই আমরা কিচেন মার্কেটের তুলনায় অনেক কম দামে মাছ বিক্রি করি। যেমন পাবদা মাছ এখানে ২৫০ টাকা কেজি, অন্যত্র ৪০০ টাকা কেজি।

মাছ কেনার কারণে ক্রেতাদের অভিমত

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা জিকো রোজারিও বলেন, ‘মূল বাজারের চেয়ে এখানে মাছের দাম অনেক কম। তাই আমি জীবন্ত এক কেজি শিং মাছ কিনেছি মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে।’

বিশদ: কেন বাজারে ক্রেতা কম?

কোরবানির ঈদের সময় সাধারণত অনেক পরিবার কোরবানি দেওয়ার কারণে বাজারে ভিড় বেশি থাকে। ঈদের তিন দিন পার হওয়ার পর অনেক পরিবার যাত্রা করেছেন বাড়ি, তাই রাজধানীর বাজার এখনো পূর্ণরূপে জমেনি। এছাড়া ঈদের পরদিন থেকে শুরু হওয়া দোকানপাটের বন্ধ থাকা ও সরবরাহ কম থাকার কারণে বাজারের বেচাকেনা হ্রাস পেয়েছে।

শাকসবজি ও মাছের সরবরাহ পরিস্থিতি

ঈদের আগে বেশিরভাগ সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষ করে শসা, টমেটো, গাজরের দাম ঈদের কিছুদিন আগে বেশি ছিলো। তবে ঈদের পর দাম হ্রাস পেয়েছে, কারণ ক্রেতার চাপ কম। একইভাবে মাছের বাজারেও এই পরিস্থিতি দেখা গেছে। মাছের চাহিদা কম থাকার কারণে বিক্রেতারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাজার ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ঈদের ছুটি শেষ হলে এবং মানুষের ঢাকায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বাজার ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, আর দামও স্থিতিশীল হবে।

সংক্ষেপে বাজার পরিস্থিতি:

  • ক্রেতার সংখ্যা: ঈদের পর কম, নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা বেশি
  • সবজি ও মাছের সরবরাহ: স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম
  • দাম: বেশিরভাগ সবজি ও মাছের দাম কমেছে
  • দোকানপাট: অনেক দোকান এখনো বন্ধ, বিশেষ করে মাংসের দোকান
  • বাজারের সামনের দিন: সরবরাহ ও ক্রেতার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button