ফ্যাক্ট চেক

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ড গেছেন। বুধবার (৭ মে) রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদের এই বিদেশযাত্রা পুরোপুরি বৈধ ও নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। তার বিদেশ যাত্রায় কোনো ধরনের আইনি নিষেধাজ্ঞা ছিল না বলেও জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

পরিবারের সঙ্গে গেছেন চিকিৎসার জন্য

সাবেক রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সূত্র জানায়, চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতেই তিনি চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক চিকিৎসক ডা. নওশাদ খান।

তারা জানান, দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা বিদেশে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ মেনেই সাবেক রাষ্ট্রপতি থাইল্যান্ডের একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

রাষ্ট্রপতির দুই মেয়াদ ও রাজনৈতিক জীবন

মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ২০তম ও ২১তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথমবার এবং ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতির শপথ নেন। দুই মেয়াদেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ ছিলেন একজন জনপ্রিয়, হাস্যরসপ্রিয় এবং সবার কাছে সহজভাবে মিশে যেতে পারা নেতা। তাঁর সময় বঙ্গভবন ছিল অনেকটাই জনবান্ধব এবং উন্মুক্ত ভাবনার প্রতিফলন।

বঙ্গভবন ছেড়ে নিকুঞ্জের বাসায়

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষ করার পর আবদুল হামিদ রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার নিজ বাসায় ওঠেন। তিনি নিয়মিত পারিবারিক সময় কাটান এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠদের মতে, বয়সজনিত জটিলতা এবং দীর্ঘদিনের কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে গত কয়েক মাস ধরে তার চিকিৎসা চলছিল। বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনাও আগে থেকেই ছিল, যা এবার বাস্তবায়ন হলো।

মামলার প্রসঙ্গ: কিশোরগঞ্জে দায়ের হওয়া একটি মামলা

সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাম একটি মামলায় উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়, যেখানে তাকে প্রধান আসামিদের একজন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনে গুলির ঘটনায় দায়ের হওয়া এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ মোট ১২৪ জনের নাম রয়েছে। মামলাটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও, আইনজীবীরা বলছেন এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারে। মামলার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

তবে এ মামলার কারণে তার বিদেশ যাত্রায় কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা ছিল না বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ইমিগ্রেশন বিভাগ। ফলে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ডে যাওয়া নিয়ে কোনো বাধা সৃষ্টি হয়নি।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া

সাবেক রাষ্ট্রপতির থাইল্যান্ড যাত্রা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারপন্থী নেতারা বিষয়টিকে একান্তই পারিবারিক ও চিকিৎসাজনিত ব্যাপার হিসেবে দেখছেন।

তারা বলছেন, একজন প্রবীণ রাষ্ট্রনেতা হিসেবে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ও মানবিক একটি পদক্ষেপ। এমনকি অনেক সময় রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়া সাবেক রাষ্ট্রপতিরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান—এটা নতুন কিছু নয়।

অন্যদিকে, কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একাংশ আবার মামলার প্রেক্ষাপট টেনে এনে সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। তবে সরকারি সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, এ যাত্রা একান্তই চিকিৎসা সংক্রান্ত এবং অনুমোদিত।

থাইল্যান্ডে চিকিৎসা: কেন জনপ্রিয়?

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য যান। বিশেষ করে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ, বিডিএমএস, বা স্যামিটিভেজ হাসপাতালগুলোর খ্যাতি দক্ষিণ এশিয়ার চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত।

থাইল্যান্ডে চিকিৎসার খরচ তুলনামূলকভাবে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বাংলাদেশিরা প্রায়শই থাইল্যান্ডকে চিকিৎসার জন্য প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও সম্ভবত ব্যাংককের এমন কোনো আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।

একজন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক, যিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দুই মেয়াদে পালন করেছেন, তার চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদ। তবে এটি নিয়ে অপ্রয়োজনীয় গুঞ্জন বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই।

আবদুল হামিদের সুস্থতা কামনা করছে দেশের আপামর জনগণ। তাঁর মতো একজন নেতার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আগামী দিনেও দেশের জন্য মূল্যবান হতে পারে। চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসবেন—এই প্রত্যাশাই এখন সবার।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button