বাংলাদেশ

তৌহিদ আফ্রিদি ক্যান্সারে আক্রান্ত, তিনি কিছু করেননি দাবি আইনজীবীর

Advertisement

জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও আইনজীবী খায়রুল ইসলাম দাবি করেছেন, তৌহিদ গুরুতর অসুস্থ, তিনি ক্যান্সার ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন এবং এই মামলায় তার কোনো ভূমিকা নেই। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

আদালতে আইনজীবীর বক্তব্য

সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানির সময় তৌহিদ আফ্রিদির শারীরিক অবস্থার কথা উল্লেখ করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম। তিনি আদালতে জানান, আফ্রিদি কিডনির গুরুতর জটিলতায় ভুগছেন, প্রস্রাবে রক্ত আসে এবং দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়াও সম্প্রতি তার লিভারের সমস্যা ও ক্যান্সারের লক্ষণ ধরা পড়েছে।

আইনজীবী দাবি করেন, অসুস্থ একজন মানুষকে রিমান্ডে পাঠানো আইনগতভাবে অন্যায় এবং মানবিক দিক থেকেও অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, “তৌহিদ আফ্রিদি এই মামলার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।”

গ্রেপ্তার ও মামলা

রোববার রাতে বরিশাল থেকে সিআইডি পুলিশ কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে আসাদুল হক বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, আফ্রিদি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে আন্দোলনের বিপক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। এতে অনেকে উসকানি পেয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে, যার ফলেই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

তবে আইনজীবীর বক্তব্য অনুযায়ী, মামলার বাদী নিজেই শপথনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন, ভুলবশত তৌহিদ আফ্রিদির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেকসই নয় বলে দাবি প্রতিরক্ষা পক্ষের।

আদালতের শুনানি ও রিমান্ড

সোমবার দুপুরে তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে তীব্র হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা তৌহিদ আফ্রিদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অপরদিকে আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নয়ন আদালতে বলেন, “তৌহিদ আফ্রিদি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী। তার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে তিনি আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেছিলেন এবং ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।”

তিনি আরও দাবি করেন, আফ্রিদি আন্দোলনে জড়িত ছাত্রদের নানা সময়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন এবং তাদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের মতে, এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তিনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন।

আইনজীবীর প্রতিবাদ

আদালতের বাইরে এসে আইনজীবী খায়রুল ইসলাম বলেন, “আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তৌহিদ আফ্রিদি একজন সুপরিচিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। অসুস্থতার কারণে তার রিমান্ড দেওয়া উচিত ছিল না। আদালতের এই আদেশ আমাদের জন্য হতাশাজনক।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী অসুস্থ ব্যক্তি, নারী বা প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে রিমান্ড দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু আদালত সেই নীতি অনুসরণ করেনি।

পারিবারিক দুঃখ-কষ্ট

শুনানির সময় আইনজীবী জানান, তৌহিদ আফ্রিদির স্ত্রী বর্তমানে গর্ভবতী। এই সময়ে তার পরিবার মারাত্মক মানসিক সংকটে পড়েছে। আইনজীবী মানবিক দিক বিবেচনায় জামিন চেয়েছিলেন। তবে আদালত সে আবেদন নাকচ করেন।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

তৌহিদ আফ্রিদির আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিনের আবেদন করবেন। পাশাপাশি তার শারীরিক অবস্থার জন্য বিশেষ চিকিৎসার দাবি জানানো হবে। মামলার পরবর্তী ধাপ কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এই মামলা ঘিরে মিডিয়া অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেপ্তার ও রিমান্ডকে ঘিরে দেশে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে রাষ্ট্রপক্ষ তাকে ‘মিডিয়া সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, অন্যদিকে আইনজীবী ও পরিবার দাবি করছে তিনি নির্দোষ ও গুরুতর অসুস্থ। এখন দেখার বিষয়, উচ্চ আদালত এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং মামলার ভবিষ্যত কোন দিকে গড়ায়।

এম আর এম – ১০৩৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button