ঈদে নতুন নোটের সংকট: ১০ টাকার জন্য দিতে হচ্ছে সাড়ে ১৪ টাকা

ঈদ উৎসবের সময় নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন নোট সংগ্রহ করা অনেকের জন্য একটি প্রথা। বিশেষ করে শিশুদের জন্য নতুন টাকা ঈদের আনন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে আসছে না, যা নতুন নোট বিক্রির দোকানগুলোতে প্রভাব ফেলেছে। ক্রেতাদের এখন ৫, ১০, ২০ টাকার নতুন নোট কিনতে হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি দামে। প্রতি বান্ডিলের দাম গত ঈদের মৌসুমের তুলনায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
নতুন নোটের সংকট
চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকায় বিভিন্ন অস্থায়ী দোকানে নতুন নোট বিক্রি হয়। ঈদের আগে বিক্রেতারা নতুন নোট সাজিয়ে রাখেন। তবে গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে ১০ টাকার নতুন নোট নেই। যেসব দোকানে রয়েছে, সেখানে ১০ টাকার এক বান্ডিল নতুন নোটের জন্য ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। ১ বান্ডিলে ১০০টি ১০ টাকার নোট থাকে, যার মূল্যমান ১ হাজার টাকা। অর্থাৎ, একটি ১০ টাকার নতুন নোটের দাম পড়ছে সাড়ে ১৪ টাকা।
দাম বৃদ্ধির কারণ
এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে আসবে না—এমন খবরে দোকানগুলোতে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা মূলত ছেঁড়া ও পুরোনো টাকার ব্যবসা করেন এবং রমজানের আগে নতুন নোট সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। বিক্রেতারা জানান, এ বছর নতুন নোটের জন্য বান্ডিলপ্রতি ক্রেতাদের ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। গত বছর রমজানের সময় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বাড়তি দিয়েই নতুন নোটের বান্ডিল পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত
প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট বাজারে ছাড়ে। তবে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ১০ মার্চ জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্রগুলো জানায়, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় আপত্তি উঠেছে।
নিউমার্কেট এলাকায় অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন অস্থায়ী দোকানি নতুন টাকা বিক্রি করেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০ রোজার পর থেকে ক্রেতাদের মধ্যে নতুন টাকার চাহিদা বাড়বে।
বিক্রেতাদের অভিজ্ঞতা
১৯৮৬ সাল থেকে নিউমার্কেটের নিচে নতুন টাকা বিক্রি করছেন কামাল হাওলাদার। তিনি বলেন, “আগের বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতা কম। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দিচ্ছে না, তাই দাম বেশি। আমি ১০ টাকার বান্ডিল এবার পাইনি। দামও বেশি তাই আর সংগ্রহ করিনি। ৫০ টাকার বান্ডিল আছে বেশি।”
গত ১০ মার্চ বিভিন্ন ব্যাংককে চিঠি দিয়ে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা জানিয়েছে, জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় কয়েকটি পক্ষ থেকে আপত্তি উঠেছে। নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে। নতুন নোটের নকশায় স্থান পাবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
নতুন নোটের সংকট এবং দাম বৃদ্ধির ফলে ঈদ উৎসবের আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে। ক্রেতাদের জন্য নতুন নোট সংগ্রহ করা এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করা যায়, শীঘ্রই এই সংকট সমাধান হবে এবং ঈদে সবাই নতুন নোটের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।