ঈদে নতুন নোটের সংকট: বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও জনমনে প্রতিক্রিয়া

প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট বাজারে ছাড়ে, যা ঈদ উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন নোট সংগ্রহ করে স্বজন ও প্রিয়জনদের মধ্যে বিতরণ করা আমাদের সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিক। তবে, এবারের ঈদে সেই চিত্র ভিন্ন হতে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করেছে যে, আসন্ন ঈদুল ফিতরে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
নতুন নোট বিতরণ স্থগিতের কারণ
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নতুন নোটের নকশায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে কিছু আপত্তি উঠেছে। এই আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নোট বিতরণ স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, আগামী মাসের শেষ নাগাদ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বাদ দিয়ে নতুন নকশার নোট বাজারে আনা হবে।
বাজারে নতুন নোটের মূল্যবৃদ্ধি
নতুন নোট বিতরণ স্থগিতের ঘোষণার পর থেকেই রাজধানীর মতিঝিল ও গুলিস্তানে নতুন নোটের অস্থায়ী দোকানগুলোতে মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ১০ টাকার এক বান্ডিল (১০০টি নোট) নতুন নোটের দাম বেড়ে ১,৪৫০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে এর প্রকৃত মূল্য ১,০০০ টাকা। গত বছর একই বান্ডিলের দাম ছিল ১,২০০ টাকা। এভাবে, ২০ টাকার বান্ডিলেও প্রায় ৪৫০ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
গুলিস্তান স্পোর্টস মার্কেটের সামনে ২০ বছর ধরে নতুন ও পুরোনো নোটের ব্যবসা করেন শাহিন আহমেদ। তিনি জানান, তাঁরা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করেন। তবে, এবার নতুন নোট বিতরণ বন্ধ থাকায় তাঁদেরও সংগ্রহে সমস্যা হচ্ছে, ফলে দাম বেড়েছে।
গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া
নতুন নোটের উচ্চমূল্য এবং সংকটের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল আমিন জানান, চার বছর পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাবেন। ঈদের দিন বাচ্চাদের সালামি দেওয়ার জন্য নতুন নোট কিনতে এসে তিনি উচ্চমূল্যের কারণে হতাশ হয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা
বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর শাখায় গচ্ছিত নতুন নোট বিনিময় না করে সংরক্ষণ করতে এবং পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদন করতে পরামর্শ দিয়েছে।
ঈদুল ফিতর বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনন্দ ও উৎসবের সময়। নতুন নোট বিতরণ এই আনন্দের একটি অংশ। তবে, এবারের পরিস্থিতিতে জনগণকে এই বিষয়ে সমঝোতা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নকশার নোট বাজারে আনার জন্য কাজ করছে, যা আগামী মাসের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।