বরিশালে তালাকের পর যুবকের অদ্ভুত প্রতিবাদ: ২০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দামোদারকাঠি গ্রামে এক অদ্ভুত ও অনন্য ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মো. সজীব সরদার নামের এক যুবক, যিনি সম্প্রতি স্ত্রী কাজলের কাছ থেকে তালাক পান, বুধবার সকালে নিজের বাড়ির উঠোনে ২০ কেজি তরল দুধ দিয়ে গোসল করেন।
এই ঘটনা মুহূর্তে মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করা হয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি দেখার পর মানুষজনের মধ্যে বিস্ময়, কৌতূহল ও সমবেদনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
যুবক ও তার স্ত্রী পরিচয় ও বিবাহের পটভূমি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মো. সজীব সরদার দামোদারকাঠি গ্রামের মো. এসকেন্দার আলী সরদারের পুত্র। চলতি বছরের ২৫ মে তিনি একই গ্রামের কাজল নামের তরুণীর সঙ্গে পারিবারিক অনুমতি ছাড়াই প্রেমের বিয়ে করেন।
বিয়ের মাত্র দুই মাস পর, জীবিকার তাগিদে সজীব দুবাই পাড়ি জমান। কিন্তু স্ত্রী কাজলের অনুরোধে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
সজীবের অভিযোগ, দেশে ফিরে আসার পর স্ত্রী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছ থেকে নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে পারিবারিক কলহ তীব্র আকার ধারণ করলে ছয় মাসের মাথায় কাজল তাকে তালাক দেন।
মানসিক ও শারীরিক অবস্থা
তালাকের পর সজীব মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। নিজেকে খারাপ অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করেন। গুরুতর অবস্থায় তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও কাজল তালাকের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
দুধ দিয়ে গোসল: প্রথাগত নয়, কিন্তু প্রতীকী
আনুষ্ঠানিক তালাক কার্যকর হওয়ার পর বুধবার সকালে সজীব স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে বাড়ির উঠোনে ২০ কেজি তরল দুধ দিয়ে গোসল করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
“আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। দুধ দিয়ে গোসল করেছি মন পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে। নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই।”
এটি একটি প্রতীকী কার্যক্রম হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা তার মানসিক মুক্তি ও নতুন জীবন শুরু করার সংকল্প প্রকাশ করে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় ও অনলাইনে মানুষজন ভিডিওটি দেখার পর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। কেউ কেউ এটি সমবেদনার দৃষ্টিতে দেখেছেন, কেউ আবার কৌতূহল ও মজার দৃষ্টিতে মন্তব্য করেছেন। সামাজিক মিডিয়ায় ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।
এছাড়া বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা যেমন আলোচনা করেছেন, তেমনই বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে এই ঘটনা নিয়ে কৌতূহলপূর্ণ আলোচনার ঝড় বইছে।
স্ত্রী কাজলের বক্তব্য
সজীবের স্ত্রী কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি বন্ধ রাখেন এবং সাংবাদিকদের সামনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ
স্থানীয় আলেমরা এই ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, ইসলামে দুধ দিয়ে গোসলের কোনো নিয়ম নেই। তারা বলেছেন,
“এমন দুঃসময়ে পরিবারের ও সমাজের উচিত মানুষটিকে মানসিক সহায়তা দেয়া।”
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক ভেঙে পড়া অবস্থায় সামাজিক সমর্থন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ ও পরিবারকে উচিত সহমর্মিতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করা।
মনোবিজ্ঞান ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্লেষণ
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, একাধিক ধরনের মানসিক চাপ ও ব্যক্তিগত আঘাত মানুষকে অদ্ভুত বা অপ্রচলিত আচরণে প্ররোচিত করতে পারে। এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, তালাক, অর্থনৈতিক চাপ ও সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক আঘাত যুবককে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলেছে।
দুধ দিয়ে গোসল করা একটি প্রতীকী কাজ, যা স্ট্রেস মুক্তি এবং নতুন জীবন শুরু করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের আচরণকে ‘ক্যাটার্টিক্স’ বা আবেগপ্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সামাজিক সচেতনতা ও গুরুত্ব
এই ঘটনা থেকে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো, মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমর্থন সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ ও পরিবার যদি সময়মতো মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদান করে, তবে এমন চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।
অতএব, পরিবার ও সমাজকে উচিত মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দামোদারকাঠি গ্রামের এই যুবকের দুধ দিয়ে গোসলের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও এটি শুধু একটি ভিডিও নয়। এটি মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক সমর্থন এবং ব্যক্তিগত প্রতীকী কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব তুলে ধরে।
সজীবের মতো মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করা এবং সমাজে সহানুভূতির পরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
MAH – 13898 I Signalbd.com



