
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ৮টি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দায়িত্বে থাকা ১০২ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন নিয়োগের অংশ হিসেবে তাঁদেরকে বিভাগীয় কমিশনারদের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে কী বলা হয়েছে
বুধবার (৩০ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত মোট আটটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে তাঁদের সিনিয়র সহকারী কমিশনার বা সহকারী কমিশনার হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারদের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হলো। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তা জনস্বার্থে অবিলম্বে কার্যকর হবে।
কোন কোন কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তের আওতায়
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত কর্মকর্তারা মূলত ৩৭তম বিসিএস ব্যাচের। এতদিন তাঁরা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সূত্র জানায়, এই কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে মাঠ প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করে নতুনভাবে বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব কেন গুরুত্বপূর্ণ
সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভূমি ব্যবস্থাপনা, সরকারি খাসজমির তদারকি, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা, ভূমি সংক্রান্ত মামলা এবং সাধারণ জনগণের ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান এই কর্মকর্তাদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ফলে এই পদে থাকা কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বছরের পর বছর মাঠ পর্যায়ে কাজ করে কর্মকর্তারা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। এরপর তাঁদের ধাপে ধাপে সিনিয়র পদে পদায়ন করা হয়। এবারও সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ১০২ জন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এই সিদ্ধান্তের প্রভাব
সরকারি এই রদবদল মাঠ প্রশাসনের কাজে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকেই। নতুন কর্মকর্তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর মাঠ পর্যায়ের কাজের ধারা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। একই সঙ্গে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সাধারণ মানুষের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে অস্থায়ী ধীরগতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, যেসব কর্মকর্তা মাঠ পর্যায় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছেন, তাঁদেরকে মূলত নীতিগত কাজে সম্পৃক্ত করা হবে। এর ফলে তাঁরা আরও কৌশলগত পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত
প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পরিবর্তন সরকারি কাজে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পর্যায়ক্রমে বদল হয়, যাতে তাঁরা মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে উচ্চপদে আরও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুবুল হক বলেন, “এই পরিবর্তন শুধু ব্যক্তিগত পদোন্নতির জন্য নয়, বরং প্রশাসনের ভেতরে নতুন প্রাণ সঞ্চারের জন্য করা হয়ে থাকে। তবে হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে সাধারণ মানুষের সেবা কিছুদিনের জন্য ধীর হতে পারে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই রদবদলের পর দ্রুত নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। যেসব পদ শূন্য হয়েছে, সেখানে নতুন এসি ল্যান্ড নিয়োগ দেওয়া হবে। সরকারের লক্ষ্য হলো মাঠ পর্যায়ে সেবার মান বৃদ্ধি করা।
নতুন কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হলে প্রশাসনের দক্ষতা আরও বাড়বে বলে মন্ত্রণালয় আশা করছে।
ঘটনার সারসংক্ষেপ
দেশের মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করা মোট ১০২ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ডকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নতুনভাবে ন্যস্ত করা হয়েছে। এ পরিবর্তন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
১০২ জন এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই মাঠ প্রশাসনের একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে দেখছেন। তবে, এই পরিবর্তন মাঠ প্রশাসনের কাজের গতিতে স্বল্পমেয়াদে কিছু প্রভাব ফেলতে পারে। নতুন নিয়োগ এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের পর কাজের গতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই রদবদল মাঠ পর্যায়ের সেবা প্রদানে কতটা নতুন গতি আনতে পারে।
এম আর এম – ০৬০৩ , Signalbd.com