ঢাকা-খুলনা-চিলাহাটিগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে নিজের ব্যাগে থাকা জুস খেয়ে এক অজ্ঞান পার্টির সদস্য নিজেও অচেতন হয়ে পড়েছেন। এই ঘটনায় গুরুতরভাবে প্রভাবিত হয়েছেন এক মা-মেয়ে, যাদের সঙ্গে তিনি জুস খাওয়ার সময় তাদের অলংকারও চুরি করার চেষ্টা করেছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে বিরামপুর-সৈয়দপুর রেলপথে শনিবার ভোরে। রেলযাত্রীরা বলেন, ট্রেনে যাত্রা চলাকালীন ফুল মিয়া (৫৫), যিনি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আব্দুল্লাপুর এলাকার বাসিন্দা, তাদের পাশের আসনে বসেছিলেন। প্রথমে তিনি ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই জুস খাওয়ার প্রস্তাব দেন।
ভুক্তভোগীরা: মা-মেয়ে
ভুক্তভোগী যাত্রীরা হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার করনাই গ্রামের কৌশিলা রায় (৫০) এবং তার মেয়ে বীথি রানী (২৮)। কৌশিলা রায় জানিয়েছেন, ট্রেনে ওঠার সময় ফুল মিয়া বন্ধু ভাব দেখিয়েছেন। আলাপ চলাকালীন, তিনি মা-মেয়েকে জুস খেতে দেন। জুস খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মা-মেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন।
ফুল মিয়ার উদ্দেশ্য ছিল তাদের কানের দুল ও নাকের ফুল খুলে নেওয়া। তবে পাশের একজন যাত্রী বিষয়টি লক্ষ্য করেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম সময়মতো হস্তক্ষেপ করে ফুল মিয়াকে আটক করেন।
ঘটনার চাঞ্চল্যকর মোড়
আব্দুর রহিম ফুল মিয়াকে ধরে রাখার পর তিনি জুস খাওয়ার প্রস্তাব অস্বীকার করলে, তিনি এবং অন্য যাত্রীরা তার ব্যাগে থাকা জুস পান করান। অদ্ভুতভাবে, জুস পান করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফুল মিয়াও অচেতন হয়ে পড়েন। ট্রেনে দায়িত্বরত পুলিশকে খবর দেওয়ার পর, রেলওয়ে পুলিশ দ্রুত ভুক্তভোগী মা-মেয়েসহ ফুল মিয়াকে সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদ-উন নবী জানান, ঘটনার পর ভুক্তভোগী এবং আসামি উভয়েরই জ্ঞান এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি।
আইনানুগ ব্যবস্থা ও মামলা
ভুক্তভোগীর ছেলে রবীন্দ্র নাথ রায় বাদী হয়ে ফুল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। জানা গেছে, ফুল মিয়ার নামে দেশের বিভিন্ন রেলওয়ে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। রেলওয়ে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে এবং তাকে আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হচ্ছে।
রেল যাত্রীর নিরাপত্তা: গুরুত্বের বিষয়
এ ধরনের ঘটনা ট্রেনে যাত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষত দীর্ঘ দূরত্বের রেলপথে যাত্রীদের সঙ্গে অপরিচিত যাত্রীর আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। রেলওয়ে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বিভাগ নিয়মিতভাবে ট্রেনের নিরাপত্তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তবে যাত্রীদের নিজস্ব সতর্কতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রেনে অপরিচিতের সাথে খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষত, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
পূর্বের অনুরূপ ঘটনা
বাংলাদেশের রেলপথে অতীতে কয়েকটি অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অচেতন করা, জিনিসপত্র চুরি এবং দেহের ক্ষতি সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছে। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে সিসিটিভি মনিটরিং, পুলিশ টহল এবং যাত্রী সচেতনতা কর্মসূচি চালাচ্ছেন।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেছেন যে, যাত্রীরা যেন তাদের ব্যাগ, অলংকার, মূল্যবান জিনিস এবং শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেন। ট্রেনের ভ্রমণকালে অচেনা মানুষের সাথে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। যাত্রীদের নিরাপদে ট্রেন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে নতুন নিয়মাবলী প্রণয়ন করা হচ্ছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফুল মিয়ার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত শেষ হলে তাকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, ভুক্তভোগী মা-মেয়ের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই বলেছেন, ট্রেনে নিরাপত্তা আরও কঠোর করা দরকার। কিছু ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন যে, “যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেতনতা এবং আইন দুইই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”
অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, যে কোনো অপরিচিত ব্যক্তি থেকে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করার আগে দ্রুত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
সারসংক্ষেপ
- ঘটনা: সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে জুস খাওয়ানোর মাধ্যমে মা-মেয়ে অচেতন হওয়ার চেষ্টা।
- আসামি: ফুল মিয়া (৫৫), রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আব্দুল্লাপুর এলাকার বাসিন্দা।
- ভুক্তভোগী: কৌশিলা রায় (৫০) এবং তার মেয়ে বীথি রানী (২৮)।
- হ্যান্ডলার: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম।
- চিকিৎসা: ভুক্তভোগী এবং আসামি সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
- আইনি ব্যবস্থা: মামলা দায়ের, তদন্ত চলমান।
এই ঘটনা রেলযাত্রীদের সচেতনতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় উদাহরণ। নিরাপত্তা ও সতর্কতার মাধ্যমেই দীর্ঘ ট্রিপে বিপদ এড়ানো সম্ভব।
MAH – 12553, Signalbd.com
