
কুরআনের এ আয়াত মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রকৃত অভিভাবক ও সাহায্যকারী কেবল আল্লাহ তায়ালা। মানুষ যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ ছাড়া আর কেউ প্রকৃত সাহায্য দিতে পারে না।
পবিত্র কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষকে একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। সূরা বাকারা, আয়াত ১০৭-এ আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন: “আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।” এই আয়াত শুধু একটি উপদেশ নয়, বরং মানুষের জীবন ও বিশ্বাসের মূল ভিত্তি। আধুনিক পৃথিবীর নানা জটিলতার মাঝেও এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আল্লাহই একমাত্র রক্ষাকারী।
সূরা বাকারা আয়াত ১০৭-এর প্রেক্ষাপট
সূরা বাকারা কুরআনের দ্বিতীয় ও দীর্ঘতম সূরা। এতে মুসলমানদের জন্য জীবনবিধান, ইবাদত, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার নানা দিক নির্দেশনা রয়েছে। আয়াত ১০৭-এ আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মানুষ যতই অন্য কারও ওপর নির্ভর করুক, চূড়ান্ত সময়ে প্রকৃত সাহায্যদাতা একমাত্র আল্লাহ।
অন্য আয়াতসমূহে আল্লাহর সাহায্যে
শুধু সূরা বাকারায় নয়, কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়টি জোর দিয়ে বলা হয়েছে। যেমন—
- সূরা নিসা, আয়াত ৪৫: “আর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট।”
- সূরা আনফাল, আয়াত ১০: “সাহায্য তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।”
- সূরা ফুরকান, আয়াত ৩১: “আপনার প্রতিপালকই সঠিক পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে যথেষ্ট।”
- সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৫৫: “তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ।”
এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, আল্লাহ ছাড়া মানুষের পাশে আর কেউ স্থায়ীভাবে দাঁড়াতে পারে না।
দুনিয়াবি সম্পর্ক বনাম প্রকৃত অভিভাবক
মানুষ স্বাভাবিকভাবে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের ওপর ভরসা করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কঠিন পরীক্ষার মুহূর্তে সবাই পাশে থাকতে পারে না। অর্থ, ক্ষমতা কিংবা সামাজিক অবস্থান সবকিছুই সীমিত। কিন্তু আল্লাহর দয়া ও সাহায্য অসীম। তাই দুনিয়ার সম্পর্কগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও চূড়ান্ত অভিভাবক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নন।
মুমিনদের পারস্পরিক দায়িত্ব
কুরআনে আরও বলা হয়েছে—মুমিন পুরুষ ও মহিলা একে অপরের বন্ধু, তারা সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে (সূরা তাওবাহ, আয়াত ৭১)। এ থেকে বোঝা যায়, সামাজিকভাবে মুমিনরা একে অপরের সহযোগী হলেও, সেই সহযোগিতার মূল ভিত্তি আল্লাহর নির্দেশ। অর্থাৎ, মানুষের পারস্পরিক সাহায্য আল্লাহর অনুমতি ও সন্তুষ্টির মাধ্যমেই কার্যকর হয়।
রাসূল (সা.)-এর জীবনে আল্লাহর সাহায্যের প্রমাণ
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রকৃত সাহায্য কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। যেমন—তাহরীম সূরার আয়াতে উল্লেখ আছে, নবীর পাশে আল্লাহর সঙ্গে সঙ্গে জিবরাঈল (আ.), সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ ও ফেরেশতাগণও সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন, নবী কিংবা মুমিনদের প্রকৃত বন্ধু ও রক্ষাকারী তিনিই।
মুসলমানের জীবনে এ আয়াতের তাৎপর্য
আল্লাহর ওপর ভরসা করা মানে দুনিয়ার সব কারণ-উপকরণকে অস্বীকার করা নয়। বরং মুসলমান চেষ্টা করবে, পরিশ্রম করবে, সমাজ থেকে সহযোগিতা নেবে। কিন্তু মনের গভীরে বিশ্বাস রাখতে হবে—ফলাফল আসে আল্লাহর অনুমতিতেই। এই বিশ্বাস মানুষের অন্তরে শান্তি আনে এবং বিপদের সময় ধৈর্য ধারণে সহায়তা করে।
আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মুক্তি নেই
ইতিহাস সাক্ষী, ফেরাউন, নেমরুদ কিংবা অন্য শাসকেরা যখন নিজেদের শক্তি ও ক্ষমতার ওপর নির্ভর করেছিল, তখন তারা ধ্বংস হয়েছিল। অন্যদিকে নবী ও মুমিনরা আল্লাহর সাহায্যের ওপর নির্ভর করে বিজয় অর্জন করেছিলেন। তাই আজকের মুসলমানেরও উচিত, ব্যক্তিগত জীবন, সমাজ, অর্থনীতি বা রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দিকনির্দেশনার ওপর ভরসা করা।
পরিশেষে
সূরা বাকারা, আয়াত ১০৭ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানুষ সীমিত, আর আল্লাহ অসীম। দুনিয়ার জীবনে মানুষ যতই পরিকল্পনা করুক, শেষ পর্যন্ত প্রকৃত সাহায্য ও রক্ষা একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। তাই একজন মুসলমানের উচিত আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা এবং প্রতিটি কাজে তাঁর সাহায্য কামনা করা।
এম আর এম – ১০৩৮, Signalbd.com