ফ্যাক্ট চেক

মাস শেষে হাতে কিছু টাকা রাখার ৭টি উপায়

Advertisement

মাসজুড়ে অপ্রয়োজনীয় খরচে শেষ হয়ে যাচ্ছে বেতন? একটু পরিকল্পনা ও সচেতনতা থাকলে মাস শেষে হাতে কিছু টাকা রাখা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত বাজেট, খরচের হিসাব এবং কিছু সহজ অভ্যাস আপনাকে সঞ্চয়ে সহায়তা করবে।

মাসের শুরুতে স্বস্তি, শেষে দুশ্চিন্তা

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী—অনেকেই একই সমস্যায় ভোগেন। মাসের শুরুতে বেতন হাতে এলেই খরচের ধুম পড়ে যায়, অথচ মাসের শেষ দিকে হাতে টাকার অভাব দেখা দেয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লেও অনিয়ন্ত্রিত খরচই মূলত সঞ্চয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে কয়েকটি সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

খরচের হিসাব রাখা জরুরি

মাস শেষে টাকার হিসাব মেলাতে না পারার অন্যতম কারণ হলো খরচের কোনো রেকর্ড না রাখা। প্রতিদিন কোন খাতে কত টাকা খরচ হলো, সেটা লিখে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খাতা, ক্যালেন্ডার বা স্মার্টফোনের নোটপ্যাডে লিখলেই চলবে।
এভাবে লিখলে অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করা সহজ হবে এবং পরবর্তী মাসে কোথায় খরচ কমানো যায় তা বোঝা যাবে।

মাসের শুরুতেই বাজেট তৈরি করুন

বেতন হাতে পাওয়ার পর খরচের একটি তালিকা তৈরি করুন। বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ-পানি বিল, খাবার, যাতায়াত, ওষুধ, জরুরি খরচ—প্রতিটি খাতে কত খরচ হবে তার একটা সীমা নির্ধারণ করুন।
বাজেট তৈরি করলে মাসের মাঝপথে খরচ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় এবং সঞ্চয়ের জন্যও টাকা আলাদা রাখা সম্ভব হয়।

হুজুগে খরচ কমানো

অনেকেই সামান্য প্রলোভনে অনলাইনে খাবার অর্ডার দেন, নতুন পোশাক কিনে ফেলেন বা অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে যান। এসব খরচ দেখতে ছোট মনে হলেও মাস শেষে বড় অঙ্কের টাকার অপচয় হয়ে যায়।
তাই প্রতিটি খরচের আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন—এটা কি সত্যিই প্রয়োজন? পরিকল্পনা ছাড়া কোনো খরচ না করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।

আয়ের অংশ সঞ্চয়ে রাখুন

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সঞ্চয়কে ‘যদি টাকা বাঁচে তবে জমাব’ এমন দৃষ্টিতে না দেখে বরং বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু অংশ সঞ্চয়ে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আয়ের ১০-২০ শতাংশ শুরুতেই আলাদা করে রাখুন। ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো নিরাপদ মাধ্যমে তা জমা রাখতে পারেন। এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে মাস শেষে সব খরচ মিটিয়েও কিছু টাকা আপনার হাতে থেকে যাবে।

সেল ও ডিসকাউন্টের ফাঁদ এড়িয়ে চলুন

অনেক সময় বিভিন্ন দোকান বা অনলাইন শপিং সাইটের সেল দেখে আমরা অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় টাকা খরচ করে ফেলি।
ডিসকাউন্ট অফার দেখে কেনার আগে ভালো করে ভেবে দেখুন, জিনিসটি সত্যিই দরকার কি না। অপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য কম দামে পেলেও সেটি আসলে খরচই বাড়ায়।

মাসে অন্তত একদিন খরচহীন দিন

মাসে অন্তত একটি দিন নির্ধারণ করুন, যেদিন এক টাকাও খরচ করবেন না।
সেদিন বাইরে খেতে না গিয়ে ঘরে রান্না করুন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, বই পড়ুন বা টেলিভিশন দেখুন।
এই অভ্যাস ধীরে ধীরে অপ্রয়োজনীয় খরচের চাপ কমাবে এবং খরচের মানসিকতা নিয়ন্ত্রণে আনবে।

ধার না করার অভ্যাস গড়ে তুলুন

মাসের শেষ দিকে অনেকেই খরচ সামলাতে ধার করেন। কিন্তু এই ধার শোধ করতে গিয়ে পরের মাসের বাজেটও বিঘ্নিত হয়।
তাই ধার না করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় খরচ একেবারে কমিয়ে আনুন এবং সীমিত বাজেটের মধ্যেই খরচের পরিকল্পনা করুন।

পরামর্শ

ব্যক্তিগত অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, খরচের শৃঙ্খলা না মানলে আয়ের অঙ্ক যতই বাড়ুক, সঞ্চয় করা সম্ভব নয়।
তাদের মতে, স্বনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করাই হচ্ছে মাস শেষে কিছু টাকা হাতে রাখার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

শেষ কথা

মাস শেষে হাতে কিছু টাকা রাখতে হলে সবচেয়ে জরুরি হলো খরচের শৃঙ্খলা ও সচেতনতা।
আজ থেকেই খরচের রেকর্ড রাখা, বাজেট তৈরি এবং সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া শুরু করুন।
অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে আজ থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুলবেন না কেন?

এম আর এম – ০৬২৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button