ফ্যাক্ট চেক

২৮ জুলাই গ্রীষ্মের মনোমুগ্ধকর আকাশমণ্ডলী দেখুন রাতের আকাশে

Advertisement

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের আকাশপ্রেমীদের জন্য গ্রীষ্মের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর আকাশবিন্যাস উপহার নিয়ে আসছে ২৮ জুলাই রাত। এই রাতে আকাশে থাকবে এক অসাধারণ দৃশ্য—মঙ্গলের কাছে আলোকিত বাঁকা চাঁদ এবং সঙ্গে থাকবে একাধিক উল্কাবৃষ্টির ঝরনা, যা রাতকে করবে একদমই রূপকথার মতো।

২৮ জুলাই: চাঁদ ও মঙ্গলের কাছে মিলন

২৮ জুলাই সূর্যাস্তের প্রায় ৪৫ মিনিট পর পশ্চিম আকাশে দেখা মিলবে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সংযোগের। মঙ্গল গ্রহ এবং ১৯ শতাংশ আলোকিত একটি বাঁকা চাঁদ আকাশে থাকবে মাত্র ১ ডিগ্রি ব্যবধানে, যা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে পরিষ্কার দেখা যাবে। বিশেষ করে যদি খোলা মাঠ বা পার্কের মতো অবাধ স্থান থেকে আকাশ দেখা যায়, তাহলে এই সৌন্দর্য উপভোগ করার আনন্দ দ্বিগুণ হবে।

মঙ্গলের উজ্জ্বলতা যতটা ছিল বছরব্যাপী, তার থেকে কিছুটা কমলেও এখনো এটি আকাশে লালচে এক উজ্জ্বল বিন্দু হিসেবে নজর কেড়ে নেয়। আর চাঁদের ‘আর্থশাইন’ বা ‘Earthshine’ দেখা যাবে, যেখানে চাঁদের অন্ধকার অংশটি পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত সূর্যালোকে আলোকিত হবে, যা আকাশে এক রহস্যময় এবং মায়াময় আলো ছড়াবে।

একাধিক উল্কাবৃষ্টি: রাতের আকাশে জমজমাট ঝলক

২৮ জুলাই ভোরের দিকে পার্থিব পিসিস (Piscis Austrinids) উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে, যা মূলত ছোট ধরনের হলেও প্রতি ঘণ্টায় ৫টি উল্কা পর্যন্ত দেখা যেতে পারে। তবে এটিই শেষ নয়, ২৯ ও ৩০ জুলাই রাতগুলোতে আরও দুটি শক্তিশালী উল্কাবৃষ্টি—ডেলটা অ্যাকুয়ারিড (Delta Aquarids) এবং আলফা ক্যাপরিকর্নিড (Alpha Capricornids) আকাশে ঝলমল করবে।

ডেলটা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টি পিক সময় প্রতি ঘণ্টায় ২০টির মতো উল্কাবৃষ্টি প্রদর্শন করতে পারে। আলফা ক্যাপরিকর্নিডও প্রতি ঘণ্টায় আরও ৫টি উল্কা যোগ করবে এই আকর্ষণীয় দৃশ্যে। ফলে ২৮ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত তিন দিনের এক অপূর্ব উল্কাবৃষ্টি উৎসব হবে।

চাঁদের আলো নেই, দেখা যাবে উল্কাবৃষ্টির পূর্ণ সৌন্দর্য

একটি বিশেষ খবর হলো, ২৮ জুলাই রাতে সূর্যাস্তের পর মঙ্গল ও চাঁদ আকাশে মাত্র দুই ঘণ্টা থাকবে এবং তারপর তারা দ্রুত দিগন্তের নিচে অস্ত যাবে। ফলে রাতভর থাকবে চাঁদের আলো থেকে মুক্ত একটি নিখাঁদ আকাশ, যা উল্কাবৃষ্টি দেখতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে।

চাঁদের আলো অনেক সময় উল্কাবৃষ্টির স্বচ্ছতা কমিয়ে দেয়, কিন্তু এই রাতে তা ঘটবে না, তাই পুরো রাতই উল্কাবৃষ্টির চমক উপভোগের জন্য আদর্শ।

পার্সিয়েডস উল্কাবৃষ্টি: আগস্টের পিকের অপেক্ষা না করেই দেখুন সৌন্দর্য

সাধারণত জুলাইয়ের শেষের দিনগুলোতে শুরু হয় বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল উল্কাবৃষ্টি পার্সিয়েডস (Perseids)। এর পিক ১২-১৩ আগস্টে হলেও তখন আকাশে থাকবে উজ্জ্বল পূর্ণিমার আলো, যা ‘স্টারজন মুন’ (Sturgeon Moon) নামে পরিচিত। এই পূর্ণিমা ৯ আগস্ট উঠবে, এবং পূর্ণিমার প্রায় ৮৪ শতাংশ আলো পার্সিয়েডস উল্কাগুলোকে অস্পষ্ট করে দিতে পারে।

অতএব, উল্কাবৃষ্টি উপভোগের জন্য ২৮-৩০ জুলাই রাতগুলোকে সবচেয়ে ভালো সময় ধরা হচ্ছে, কারণ তখন চাঁদের আলো কম থাকবে এবং পিসিস, ডেলটা অ্যাকুয়ারিড ও আলফা ক্যাপরিকর্নিডের উল্কাবৃষ্টির সমাহার আকাশে জমজমাট পরিবেশ তৈরি করবে।

কেন গ্রীষ্মের আকাশ এত সুন্দর?

গ্রীষ্মের আকাশে উল্কাবৃষ্টি সাধারণত বেশি দেখা যায় কারণ এই সময় পৃথিবী উল্কাপিণ্ড বা ধূমকেতুর কণা প্রবাহের মধ্য দিয়ে যায়। এই ছোট ছোট ধূলিকণাগুলো বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ছাই বা উল্কা হয়ে ঝরে পড়ে, যা আমরা উল্কাবৃষ্টি হিসেবে দেখি।

গ্রীষ্মের এই রাতগুলোতে, বিশেষ করে ২৮ জুলাই থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত, আকাশ অনেক বেশি পরিষ্কার থাকে। ধুলো-ময়লা কম থাকে এবং আকাশের আলোও তুলনামূলক কম থাকে, যা একে আরেকটু বেশি মনোমুগ্ধকর করে তোলে।

উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য সেরা স্থান ও সময়

উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হলো শহরের আলোর দূরত্বে থাকা খোলা মাঠ, পার্ক বা পাহাড়ি এলাকা। শহরের আলোকদূষণ কম এমন জায়গায় উল্কাবৃষ্টি আরও ভালো দেখা যায়।

২৮ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত উল্কাগুলো দেখতে পারবেন, বিশেষ করে ভোরের দিকে যখন আকাশ গভীর অন্ধকারে পরিণত হয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এই সময়টি হবে সর্বোত্তম।

২৮ জুলাই রাতের আকাশে যা দেখা যাবে

  • সূর্যাস্তের প্রায় ৪৫ মিনিট পর পশ্চিম আকাশে ১৯ শতাংশ আলোকিত বাঁকা চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থান।
  • চাঁদের ‘আর্থশাইন’ এর রহস্যময় আলোর ছোঁয়া।
  • পিসিস অস্ট্রিনিডস উল্কাবৃষ্টি (প্রতি ঘণ্টায় ৫টি উল্কা পর্যন্ত)।
  • পরবর্তী দুই রাতে ডেলটা অ্যাকুয়ারিড (২০টি প্রতি ঘণ্টায়) এবং আলফা ক্যাপরিকর্নিড (৫টি প্রতি ঘণ্টায়) উল্কাবৃষ্টি।
  • রাতের শেষ দিকে চাঁদের আলো না থাকায় উল্কাবৃষ্টি দেখার সেরা পরিবেশ।

এক নজরে ২৮-৩০ জুলাই উল্কাবৃষ্টির সময়সূচি

তারিখউল্কাবৃষ্টির নামপ্রতি ঘণ্টায় উল্কার সংখ্যাবিশেষ তথ্য
২৮ জুলাই (রাত)পিসিস অস্ট্রিনিডস (Piscis Austrinids)ছোট ধরনের, শুরু হিসেবে
২৯ জুলাই (রাত)ডেলটা অ্যাকুয়ারিড (Delta Aquarids)২০আকাশ পরিষ্কার হলে খুব সুন্দর
৩০ জুলাই (রাত)আলফা ক্যাপরিকর্নিড (Alpha Capricornids)অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত, তবে সুন্দর

বিশেষ সতর্কতা ও টিপস

  • উল্কাবৃষ্টি দেখতে হলে আকাশ পরিষ্কার থাকা অত্যন্ত জরুরি। মেঘলা বা বৃষ্টির দিন এ সুযোগ হারাতে হতে পারে।
  • চোখের ক্ষতি থেকে বাঁচতে কোনো ধরনের চশমা বা বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই, কারণ উল্কাবৃষ্টি সাধারণ চোখে দেখা যায়।
  • মোবাইল ক্যামেরা বা ক্যামেরা দিয়ে উল্কাবৃষ্টি ক্যাপচার করতে চাইলে ট্রাইপড ব্যবহার করুন, কারণ দীর্ঘ এক্সপোজার দরকার হয়।

২৮ জুলাই থেকে শুরু হতে যাচ্ছে গ্রীষ্মের রাতের এক বিরল মহোৎসব। মঙ্গল গ্রহের লাল আলোর পাশে বাঁকা চাঁদের রহস্যময় জ্যোতি, সঙ্গে একাধিক উল্কাবৃষ্টির ঝরনা—সব মিলিয়ে আকাশপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ উপহার।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে এই দৃশ্যের সার্থকতা উপভোগ করা সম্ভব। তাই চোখ রাখুন পশ্চিম আকাশে, প্রস্তুত হোন এক অলৌকিক রাতের জন্য।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button