ফ্যাক্ট চেক

হারাম টাকা দানে যে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে

Advertisement

 ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হারাম পথে উপার্জন করে তা দান করলেও কোনো সওয়াব পাওয়া যায় না; বরং তা জাহান্নামের শাস্তি ডেকে আনে। হারাম অর্থে দান, হজ বা অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে তা বৈধ হয় না। ইসলাম এই বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

হারাম উপার্জনের ভয়াবহতা

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানুষের জীবন পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য রয়েছে স্পষ্ট নির্দেশনা। জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রেও ইসলামের রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। ইসলাম বলে দেয় কোন পথে উপার্জন হালাল এবং কোন পথে হারাম। হারাম পন্থায় উপার্জন শুধু গুনাহ নয়, তা দিয়ে ইবাদত করলেও তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।

নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি হালাল খাবার খেয়েছে, সুন্নাহ মোতাবেক আমল করেছে এবং মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, সে জান্নাতে যাবে।” (তিরমিজি: ২৫২০)

কোন কোন উপার্জন হারাম?

ইসলামে যেসব উপার্জন হারাম হিসেবে গণ্য করা হয় তার মধ্যে রয়েছে:

  • সুদ ও ঘুষ
  • চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই
  • জুয়া ও প্রতারণা
  • মিথ্যাচার ও চাঁদাবাজি
  • যৌতুক আদান-প্রদান
  • জবরদখল বা অন্যের সম্পদ দখল করা
  • প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন
  • অবৈধ ব্যবসা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে উপার্জন

এইসব পন্থায় উপার্জন করা সম্পদ ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম এবং তা খাওয়া, ব্যবহার করা বা দান করাও গুনাহের কাজ।

কোরআনের হুঁশিয়ারি

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন:

“তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অবৈধভাবে খেয়ো না এবং বিচারকের কাছে তা পেশ করো না, যেন অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে হস্তগত করতে পারো।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)

এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, ইসলাম শুধু হারাম উপার্জনের বিরোধিতা করে না; বরং তা সামাজিক ও বিচারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্যের অধিকার হরণ করাকেও নিষিদ্ধ করে।

হারাম উপার্জনে দান: কি বলেছে ইসলাম?

অনেকের মাঝে একটি ভুল ধারণা রয়েছে—হারাম পথে উপার্জন করা হলেও তা থেকে কিছু অংশ দান করলে, হজ করলে বা মসজিদে দান করলে তা বৈধ হয়ে যায়। কিন্তু ইসলাম এই বিষয়টিকে একেবারে অস্বীকার করেছে। কোনো অবস্থাতেই হারাম উপার্জন বৈধ হয় না।

নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“কিয়ামতের দিন কোনো ব্যক্তি নিজের স্থান থেকে এক পা-ও সরতে পারবে না যতক্ষণ না তাকে চারটি প্রশ্ন করা হবে। এর একটি হলো—সে তার সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে।” (তিরমিজি: ২৪১৭)

হারাম টাকা দিয়ে ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়

ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো পবিত্রতা। আর হারাম অর্থ অপবিত্র। ইসলাম শিক্ষা দেয়, দান-সদকা, হজ, কোরবানি সবই পবিত্র কাজ; তাই তা পবিত্র অর্থ দিয়েই করতে হবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন:
“কোনো বান্দা যদি হারাম পথে উপার্জন করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাতে কোনো বরকত দেওয়া হবে না। সে যদি তা দান করে, তা কবুল করা হবে না। বরং এই সম্পদই তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।” (মুসনাদে আহমদ: ৩৬৭২)

এখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, হারাম অর্থ দিয়ে কোনো নেক আমল কবুল হয় না। বরং এ ধরনের উপার্জনের জন্য কঠিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব

ইসলাম হালাল রুজিকে শুধু বৈধ উপার্জন হিসেবেই নয়, বরং জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গণ্য করেছে। মহান আল্লাহ বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস আহার করো, যা আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৭২)

এ আয়াতের মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে হালাল পথে রিজিক উপার্জনের জন্য এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য।

দুনিয়ায় না হলেও, আখিরাতে নিশ্চিত শাস্তি

অনেক সময় দেখা যায়, হারাম পথে উপার্জনকারী ব্যক্তির দুনিয়াতে কোনো কঠিন পরিণতি হয় না। বরং তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিতও হয়ে ওঠে। কিন্তু কোরআন-হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয়, দুনিয়া নয়, আখিরাতই হচ্ছে চূড়ান্ত বিচারালয়। সেখানে কারো হারাম উপার্জন গোপন থাকবে না।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের সবাইকে হালাল-হারামের পার্থক্য বুঝে চলার তৌফিক দান করুন। হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকাই একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য।

সারসংক্ষেপ 

হারাম উপার্জন করে দান বা ইবাদতের মাধ্যমে তা বৈধ করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। প্রতিটি মুসলমানের উচিত হালাল রুজির পেছনে ছুটে যাওয়া এবং হারামের পথে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা। আমাদের অল্প হলেও হালাল হোক, যেন তা আমাদের ইবাদত কবুল ও জান্নাতের পথে সহায়ক হয়।

এম আর এম – ০৫০৪ ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button