ফ্যাক্ট চেক

ধৈর্য গড়ে তুলতে কোরআনের ৬ শিক্ষা

Advertisement

ধৈর্য বা সবর ইসলামে এক মহৎ গুণ, যা জীবন ও দাওয়াতি কাজে অত্যন্ত জরুরি। আল্লাহর পথে আহ্বানকারীরা নানা চ্যালেঞ্জ ও বাধার মুখোমুখি হন। ব্যক্তিগত দুর্বলতা, সামাজিক অবজ্ঞা ও বিভিন্ন প্রতিকূলতা সহ্য করতে হলে ধৈর্যের বিকল্প নেই। কোরআন ও সুন্নাহ আমাদের ধৈর্য গড়ে তোলার জন্য মূল্যবান শিক্ষা দিয়েছে। এখানে ধৈর্য অর্জনের জন্য কোরআনের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আলোচনা করা হলো।

১. আল্লাহর সাহায্য চাওয়া

ধৈর্য হল অন্তরের শক্তি, যা আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি সমর্পণের মাধ্যমে জাগ্রত হয়। কোরআনে আল্লাহ বলেন,
“ধৈর্য ধরো, তোমার ধৈর্য আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়।”
(সুরা নাহল: ১২৭)

আল্লাহর সাহায্য চাওয়া ছাড়া ধৈর্য স্থায়ী হয় না। তাই আমাদের নিয়মিত দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর সাহায্য কামনা করতে হবে। ইমাম গাজ্জালি বলেন, ধৈর্য হৃদয়ের সেই শক্তি যা আল্লাহর স্মরণ ও সমর্পণের মধ্য দিয়ে জাগ্রত হয়।

২. নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া

কোরআনে নবীদের জীবনের উল্লেখ রয়েছে, যারা অনবরত ধৈর্য ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
“তাদের কথায় ধৈর্য ধরো এবং আমাদের বান্দা দাউদকে স্মরণ করো।”
(সুরা সাদ: ১৭)

নবী নূহ (আ.) প্রায় এক হাজার বছর তার জাতিকে দাওয়াতে নিয়োজিত ছিলেন, তবুও ধৈর্য হারাননি। রাসুল (সা.) নিজেও নবী মুসা (আ.) এবং অন্যান্য নবীদের ধৈর্যের উদাহরণ দিয়ে অনুপ্রাণিত হতেন। নবীদের জীবনী থেকে আমরা ধৈর্যের চর্চায় প্রেরণা নিতে পারি।

৩. নেককারদের জন্য আল্লাহর শুভ পরিণতির প্রতিশ্রুতি

আল্লাহ কোরআনে বলেছেন,
“তাই ধৈর্য ধরো; নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি নেককারদের জন্য।”
(সুরা হুদ: ৪৯)

ধৈর্য শুধু কষ্ট সহ্য করা নয়, বরং আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের একটি মাধ্যম। যারা আল্লাহর পথে ধৈর্য ধরে চলেন, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের অসীম পুরস্কার। এই বিশ্বাস আমাদের ধৈর্য ও ঈমানকে শক্তিশালী করে।

৪. দাওয়াহর দায়িত্ব পালন ও ফলাফল আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়া

কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,
“তোমার ওপর দায়িত্ব শুধু বার্তা পৌঁছে দেওয়া।”
(সুরা শুরা: ৪৮)

দাওয়াহ কর্মে ফলাফল আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অনেক সময় মানুষের প্রতিক্রিয়া আশা অনুযায়ী না হলেও আমাদের কাজ হলো সততা ও ধৈর্যের সঙ্গে বার্তা পৌঁছে দেওয়া। ফলাফল নিয়ে দুঃখ করা বা হতাশ হওয়া ঠিক নয়।

৫. আল্লাহর প্রশংসা ও তসবিহের মাধ্যমে ধৈর্য বৃদ্ধি

কোরআনে রয়েছে আদেশ,
“তাই তাদের কথায় ধৈর্য ধরো এবং তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা ও তসবিহ পড়ো।”
(সুরা তাহা: ১৩০)

আল্লাহর স্মরণ ও জিকির আমাদের মনকে শান্তি দেয় ও ধৈর্যের শক্তি বাড়ায়। নবী মুসা (আ.) তাঁর ভাই হারুন (আ.)-কে আল্লাহর প্রশংসায় সহায়তার জন্য চান। আমাদেরও উচিত নিয়মিত তসবিহ ও দোয়া দ্বারা হৃদয়কে দৃঢ় করা।

৬. ভালো ও আল্লাহ-ভীরু বন্ধু নির্বাচন

আল্লাহ বলেন,
“ধৈর্যের সহিত নিজেকে তাদের সঙ্গে রাখো, যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রতিপালককে ডাকে।”
(সুরা কাহফ: ৮)

ভালো বন্ধুর সঙ্গ ধৈর্য বাড়াতে সাহায্য করে, ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং প্রতিকূলতায় সাহস যোগায়। সুতরাং আল্লাহ-ভীরু ও নেক মানুষের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে।

ধৈর্য ইসলামের এক অপরিহার্য গুণ। কোরআনের এই ৬টি শিক্ষা আমাদের শেখায়, কিভাবে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে, নবীদের জীবনী থেকে প্রেরণা নিয়ে, শুভ পরিণতির আশায়, দায়িত্ব পালনে মনোযোগ দিয়ে, আল্লাহর প্রশংসা করে ও ভালো বন্ধুর সাথে থেকে ধৈর্য গড়ে তোলা যায়। রাসুল (সা.) নিজে ছিলেন ধৈর্যের অসাধারণ উদাহরণ। আল্লাহ আমাদের সকলকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

ধৈর্য বা সবর ইসলাম ধর্মের এক মহৎ গুণ। কোরআন নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা, আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, শুভ পরিণতির প্রতিশ্রুতি, দায়িত্ব পালন, আল্লাহর স্মরণ ও ভালো বন্ধু নির্বাচনের মাধ্যমে ধৈর্য গড়ার মূল্যবান পাঠ দেয়। এই শিক্ষা মুসলিমদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button