আজ জামারায় শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজিরারা

পবিত্র হজের তৃতীয় দিন আজ শুক্রবার (৬ জুন)। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটি মিনায় শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। স্থানীয় সময় ভোর থেকে মিনার পথে রওয়ানা দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হাজিরা। মিনায় ফিরে তাঁরা ‘জামারাত’ এলাকায় শয়তানের তিনটি প্রতীকী স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করবেন, যা ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি হিসেবে বিবেচিত।
জামারায় পাথর নিক্ষেপের তাৎপর্য
হজের এই গুরুত্বপূর্ণ রীতি মূলত হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ঘটনাকে স্মরণ করে পালন করা হয়। ইসলামী ইতিহাস মতে, ইব্রাহিম (আ.) যখন আল্লাহর আদেশে পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান তাঁকে বাধা দিতে এসেছিল। ইব্রাহিম (আ.) শয়তানকে প্রত্যাখ্যান করে তিনবার পাথর ছুড়ে মারেন। সেই ঘটনার স্মরণে আজও মুসলিমরা মিনার জামারাত এলাকায় তিনটি নির্দিষ্ট স্তম্ভে পাথর ছুড়ে শয়তানকে প্রতীকীভাবে তাড়িয়ে দেন।
মুজদালিফায় রাতযাপন শেষে মিনায় ফেরা
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) হজের দ্বিতীয় দিনে আরাফাতের ময়দানে মুসল্লিরা সমবেত হয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। দুপুরে মসজিদে নামিরা থেকে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ খুৎবা প্রদান করেন এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের শান্তি কামনা করেন।
আরাফাতের খুৎবার পর মাগরিব ও ইশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করে হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হন এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করেন। ঐতিহ্য অনুযায়ী সেখানেই মধ্যরাত পর্যন্ত ইবাদত করেন এবং জামারায় শয়তানকে মারার জন্য নির্ধারিত ৪৯টি পাথর সংগ্রহ করেন।
কোরবানি ও কাবা তাওয়াফ
আজ জামারাতে পাথর নিক্ষেপের পর হাজিরা পশু কোরবানি করবেন। এর পরপরই তাঁরা মক্কায় ফিরে গিয়ে পবিত্র কাবা ঘরের ‘তাওয়াফে জিয়ারত’ করবেন, যা হজের অন্যতম ফরজ কাজ। তাওয়াফ শেষে হাজিরা পুরুষদের মাথা মুণ্ডন বা ছোট করে চুল কাটবেন, আর নারীরা চুলের অল্পাংশ কাটবেন—যা ‘হলক’ ও ‘তকসির’ নামে পরিচিত।
এই কাজগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর হাজিরা ‘আহরাম’ থেকে মুক্তি পাবেন এবং তাঁদের জন্য হালাল হবে দৈনন্দিন সব কর্মকাণ্ড। হজের এই পর্বটি সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে হাজিরা বড় ধরনের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক তৃপ্তি লাভ করেন।
বাকি দু’দিনের আনুষ্ঠানিকতা
তাওয়াফ ও কোরবানি শেষ হলেও হজ এখানেই শেষ নয়। আগামী দু’দিন—১১ ও ১২ জিলহজ হাজিরা মিনায় অবস্থান করবেন এবং প্রতি দিন তিনটি জামারায় (ছোট, মাঝারি ও বড়) সাতটি করে পাথর ছুড়ে শয়তানকে প্রতীকীভাবে তাড়াবেন। এই রীতি ‘রমি জামারাত’ নামে পরিচিত।
এই দুই দিন মিনায় অবস্থান করে ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত এবং দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে হাজিরা তাঁদের হজের পরিপূর্ণতা অর্জন করেন। কেউ কেউ ১৩ জিলহজ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করে অতিরিক্ত একটি দিন জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করেন।
এবারের হজে ১৫ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণ
সৌদি সরকারের তথ্যমতে, এবারের হজে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লি। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই সৌদি আরবের বাইরে থেকে আগত। হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি প্রশাসন এ বছরও ব্যাপক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে হজকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সেবামূলক কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছেন প্রায় তিন লাখ সরকারি ও বেসরকারি কর্মী।
পবিত্র হজের আজকের দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জামারায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, পশু কোরবানি ও কাবা তাওয়াফের মধ্য দিয়ে মুসলিমদের আত্মিক পরিশুদ্ধির এ যাত্রা এক নতুন মাত্রা লাভ করে। বাকি দু’দিনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই হাজিরা হজের সব নিয়ম পালন শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন।