ফ্যাক্ট চেক

ভুল সংবাদে বিভ্রান্তি ছড়ালে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি বাতিল সংক্রান্ত সংবাদকে ভিত্তিহীন ও ভুয়া বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, কেউ যদি ভবিষ্যতে ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তাহলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না।

বুধবার (৪ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক জরুরি ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

“ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ ছড়ানো হয়েছে”

উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, “সংবাদপত্রে সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি বাতিল সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন, ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে—এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “মুজিবনগর সরকারের যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের স্বীকৃতি বা মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং তাঁদের অবদানের কারণেই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

সাংবাদিকদের প্রতি দায়িত্বশীলতার আহ্বান

ব্রিফিংয়ে উপ-প্রেস সচিব গণমাধ্যমের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গণমাধ্যমের একটি বড় দায়িত্ব হলো তথ্য যাচাই করে সংবাদ পরিবেশন করা। যদি কোনো সাংবাদিক ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন, আশা করি তারা সংশোধনী প্রকাশ করে দুঃখপ্রকাশ করবেন।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “এখন থেকে যদি কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করেন, এবং তা জনমনে অস্থিরতা সৃষ্টি করে—তাহলে সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান

এর আগে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম স্পষ্ট করে বলেন—জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মো. মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

তিনি বলেন, “মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দের সক্রিয় নেতৃত্বে এবং নির্দেশনায়ই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। কাজেই তাঁরা কেবল রাজনৈতিক নেতাই নন, সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা।”

ফারুক ই আজম আরও জানান, “যাঁরা সশস্ত্রভাবে যুদ্ধ করেছেন এবং যাঁরা যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, উভয়েই মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।”

ভুল তথ্য কার স্বার্থে? প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা

বিশ্লেষকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার পেছনে হয়তো রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। এমন সময় যখন সরকার মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে জাতীয় স্বীকৃতি দিতে চায়, তখন ঠিক উল্টো বক্তব্য প্রচার করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন অনেকে।

আইন কী বলে ভুল তথ্য ছড়ানো নিয়ে?

বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং প্রচলিত দণ্ডবিধিতে ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। বিশেষ করে যদি তা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হয়, তাহলে জেল-জরিমানার শাস্তিও হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সম্মান ও ইতিহাস বিকৃতির উদ্দেশ্যে ভুয়া তথ্য ছড়ানো রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে। সরকার চাইলে সহজেই এ ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

উদাহরণ: অতীতেও ভুয়া সংবাদে জরিমানা ও ক্ষমাপ্রার্থনা

পূর্বেও একাধিকবার দেখা গেছে—বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক কিংবা অনলাইন পোর্টাল ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে পরে সংশোধনী প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনি জটিলতার মুখেও পড়তে হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভুল সংবাদ কেবল বিভ্রান্তিই নয়, জাতির ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের উপর আঘাত। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে তথ্য বিকৃতি মেনে নেওয়া যায় না।

গণমাধ্যমের ভূমিকা হবে সত্য প্রকাশে—উপ-প্রেস সচিব

আজাদ মজুমদার বলেন, “গণমাধ্যম আমাদের গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আমরা চাই সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করুক, কিন্তু তা যেন তথ্যগত শুদ্ধতা বজায় রেখে হয়। মিথ্যা সংবাদ সাংবাদিকতা নয়, বরং তা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড।”

সংক্ষেপে মূল বক্তব্যসমূহ:

  • মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল সংক্রান্ত সংবাদ “ভিত্তিহীন ও ভুয়া”
  • বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে
  • বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা
  • মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা “সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা”
  • সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান
  • সরকার বিভ্রান্তি রোধে কঠোর অবস্থানে

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির আত্মপরিচয়ের অন্যতম স্তম্ভ। এই ইতিহাস বিকৃতি কিংবা ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি করার যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দিতে সরকার যেমন প্রস্তুত, তেমনি সচেতন নাগরিকদেরও সচেতন থাকতে হবে। উপ-প্রেস সচিবের হুঁশিয়ারি কেবল মিডিয়ার প্রতি বার্তা নয়, বরং সমাজের সব স্তরের জন্য সতর্কবার্তা—মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভুল তথ্যের কোনো ঠাঁই নেই।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button