কড়া পাহারায় মানিকগঞ্জে হাজিরা দিলেন সাবেক এমপি ও গায়িকা মমতাজ বেগম

মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ সকালে (২৭ মে ২০২৫) সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় গায়িকা মমতাজ বেগমকে হাজির করা হয়েছে। হ্যাট্রিকের মতো তিন দিন подряд আদালত ভ্রমণের পর আজ তার ষষ্ঠ হাজিরা—এই নিয়ে অনেক আলোচনায় রয়েছেন শিল্পী সমাজের এই চিরচেনা মুখ। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকাল সাড়ে আটটায় পুলিশের কড়া পাহারায় বেরিয়ে এসেছে তার প্রিজন ভ্য্যানটা, এরপর সরাসরি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার বিবরণ
মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে মোট দুটি মামলায় হাজিরা দেওয়া হল—
- সিঙ্গাইর হত্যাকাণ্ড মামলাঃ
- তারিখ ও স্থান: ২০১৩ সালের মেঘলা আদিবাসী–কৃষক হরতালের সমর্থনে সিঙ্গাইরে অনুষ্ঠিত মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন।
- বাদী: মো. মজনু মোল্লা (গোবিন্দল গ্রামের বাসিন্দা)
- আদালত: সিঙ্গাইর থানা, মামলা দায়ের ২৫ অক্টোবর ২০২৪
- হরিরামপুর থানা মামলা (হামলা–ভাঙচুর):
- আদালত: হরিরামপুর থানা
- বাদী: মো. দেলোয়ার হোসেন (উপজেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক)
- আদায়ের তারিখ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪
উভয় মামলায়ই মমতাজ বেগমকে “প্রধান আসামি” করে অভিযোগ করা হয়েছে। আদালতে হাজিরা শেষে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ
আজকের হাজিরা উপলক্ষে মানিকগঞ্জ আদালত চত্বরে পুলিশি বহর নিয়োজিত ছিল—
- টি-সরকারি পুলিশ ফোর্স: আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশপথ, গ্যালারি ও পার্কিং জোনে কড়া পাহারা।
- বেটারিজড মেটাল ডিটেক্টর: আদালতের প্রধান ফটকে বসানো হয়, যাতে হঠাৎ কোনো বিপজ্জনক সামগ্রী আনা না যায়।
- মহাসড়ক তালাশী: মানিকগঞ্জ–ঢাকা মহাসড়কের মোড়ে পুরোদস্তুর ট্রাফিক ও চেকপোস্ট।
- মিডিয়া প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ: সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারের প্রবেশ লাইসেন্স যাচাই করে অনুমতি।
মানিকগঞ্জের কোর্ট পরিদর্শক এম. আবুল খায়ের জানান,
“নিয়মিত হাজিরার অংশ হিসেবে রিমান্ড শেষে মমতাজ বেগমকে আদালতে আনা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়েছে।”
মমতাজ বেগম: রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি
মমতাজ বেগম বিদেশমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করেছেন। এছাড়া তার গানের কণ্ঠ-সুরে বাংলাদেশী ফোক সংগীতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রেখেছেন।
- সাংগীতিক কর্মজীবন: আইটেম গান থেকে লোকগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে আধুনিক বাংলা গান—প্রায় ৫০০ গান রেকর্ড করেছেন মমতাজ।
- রাজনীতিবিদ: ২০০৯-২০১৪ সালের মধ্যে মেয়াদী এমপি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সীটে নির্বাচিত হন।
- সমাজসেবক: পরিবেশ, নারী উন্নয়ন ও শিশু শিক্ষার মতো সামাজিক কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ।
গ্রেফতার ও রিমান্ডের ধারাঃ
- গ্রেফতারের স্থান: রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে
- গ্রেফতারের তারিখ: গত বৃহস্পতিবার (২২ মে ২০২৫)
- রিমান্ড উত্তীর্ণ: প্রথম দিন পুলিশি ৫ দিন রিমান্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদ; এরপর হাজিরার জন্য আদালতে হাজির।
- প্রিজন ভ্য্যান পরিবহন: সাদা–লাল রঙের, দুইপাশে বড় “পুলিশ” লেখা, এসি সজ্জিত।
মামলার পটভূমি ও আইনগত প্রক্রিয়া
১. সিঙ্গাইর হত্যা মামলা:
- ২০১৩ সালের ওই মিছিলে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি গুলি চালানোর ঘটনায় রিমান্ডে জেরা চালিয়ে দায়িত্বশীলদের খুঁজে বের করার চেষ্টা।
- বাদীর অভিযোগ, মমতাজ মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশি গুলির সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
২. হরিরামপুর থানার হামলা মামলা:
- অভিযোগ, নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শনকালে সাবেক এমপি মণ্ডলীর দল হামলা–ধর্ষণ ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
- স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কর্মীদের উস্কানি দিয়েছেন মমতাজ।
উভয় মামলাতেই আদালত পরবর্তী শুনানির বিজ্ঞপ্তি ১৫ জুন ২০২৫ পর্যন্ত স্থগিত করেছেন।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
- সমর্থক দলের ফোরাম:
- বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আইনকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছলে সাবেক এমপিকে হয়রানি করা হচ্ছে।”
- বিচারপ্রার্থী দর্শক:
- মানিকগঞ্জের আমুন্নাহ চত্ত্বরের ব্যবসায়ী মো. ইউনুস মন্তব্য করেন, “ন্যায়িক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক, আমরা সবাই চাই দ্রুত বাস্তবতা উদঘাটন হোক।”
- সাংস্কৃতিক মহল:
- বিভিন্ন সংগীতজ্ঞ বলছেন, “গায়িকা মমতাজের সুনাম হরণ বা রায়ের আগে সমালোচনা বন্ধ করা উচিত।”
পরবর্তী করণীয়
১. আইনী প্রক্রিয়ায় সহায়তা: মমতাজের আইনজীবী দল সমস্ত নথি ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছেন।
2. মানসিক ও শারীরিক সুরক্ষা: কারাগারে চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং প্রয়োজন হতে পারে।
3. মিডিয়া নীতি: সংবাদকর্মীরা যেন সংবাদ পরিবেশন করেন ন্যায্য ও তথ্যভিত্তিক উপায়ে।
4. জনসচেতনতা: সাধারণ মানুষ যেন দ্রুত দূষিত ข่าว বা গুজব ছড়িয়ে না দেয়; অপেক্ষা করা উচিৎ অখণ্ড তথ্যের জন্য।
কড়া পাহারায় মানিকগঞ্জ আদালতে হাজিরা দিলে মমতাজ বেগম—এখন শুধু বিচার প্রক্রিয়া নয়, জনমুখে তাঁর করণীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতার দরকারও প্রমাণিত হচ্ছে। দুই মামলার যথার্থ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকা জরুরি। বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হলে জনগণ বুঝতে পারবে, সংস্কৃতি আর রাজনীতি—কোন ক্ষেত্রেই কেউ অনাচার করলে দায়বদ্ধতার শিকার হতে হয়।