বিশ্ব

বিশ্ব আর কোনো সম্রাট চায় না: লুলার ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি

Advertisement

ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস (BRICS) ১৭তম শীর্ষ সম্মেলনে এক বিশেষ বার্তা দিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, “বিশ্ব আর কোনো সম্রাট বা একনায়কের শাসন চাই না।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই জোরালো বক্তব্যটি এসেছে ব্রিকস দেশগুলোর ওপর তাঁর ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ অভিযোগ এবং শুল্ক আরোপের হুমকির প্রতিক্রিয়ায়

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি ও ব্রিকসের প্রতিক্রিয়া

গত রোববার রাতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে বা ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ নীতি গ্রহণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপ করা হবে। এরপর সোমবার তিনি ১৪টি দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ট্রাম্প আরও বলেন, ব্রিকস যদি মার্কিন ডলারের প্রাধান্য হ্রাসের চেষ্টা করে, তবে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি রাখা হবে।

তবে ব্রিকস নেতারা এই হুমকি প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, তারা একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামোর সন্ধান করছেন, যেখানে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো হবে।

লুলা দ্য সিলভা সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ব বদলে গেছে। আমরা আর কোনো সম্রাট বা একক আধিপত্যকারীকে গ্রহণ করব না।” তাঁর মতে, ব্রিকস দেশগুলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং বহুমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য কাজ করছে যা বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্যের কাঠামোকে পরিবর্তন করবে।

ব্রিকসের মুদ্রা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা

এই সম্মেলনে সদস্যরা একসময় অভিন্ন মুদ্রা চালুর পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু বর্তমানে সেটি থেকে সরে এসেছে। তবে লুলা স্পষ্ট করেন যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের বিকল্প মুদ্রা খুঁজে বের করাই সময়ের দাবি। তিনি বলেন, “আমাদের এমন একটি পথ খুঁজতে হবে যেখানে সমস্ত বাণিজ্য লেনদেন ডলারে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা দ্রুত হবে না, ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে।”

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও ইরান, মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ইত্যাদি নতুন সদস্য ও সহযোগী দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ব্রিকস জোটে। এতে ব্রিকসের ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অন্যান্য ব্রিকস দেশের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির পর অন্যান্য ব্রিকস দেশগুলোও তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, “ব্রিকস কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব বা প্রতিযোগিতা চায় না, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।”

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, “শুল্ক আরোপের মাধ্যমে চাপে ফেলা বা বাধ্য করা উচিত নয়। ব্রিকস সকলের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে এবং কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়।”

রাশিয়ার ক্রেমলিনও উল্লেখ করেছে, তাদের ব্রিকসের সঙ্গে সহযোগিতা ‘একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে’ যা কখনোই তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না।

ভারতের পক্ষ থেকে এখনও ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি, যদিও ভারত অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।

ব্রিকস সম্মেলনে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে শুধু অর্থনীতি নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, ও আন্তর্জাতিক সংঘাত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনে গাজা পরিস্থিতিতে শর্তহীন যুদ্ধবিরতির আহ্বানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্রিকস নেতারা সম্প্রতি ইরানে বোমা হামলারও নিন্দা জানিয়েছেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও ব্রিকসের গুরুত্ব

ব্রিকস সম্মেলন ২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচ দেশের উদ্যোগে শুরু হয়। এখন এই জোটে নতুন সদস্য ও সহযোগী দেশ যোগ হওয়ার মাধ্যমে এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিকস নতুন বিশ্বব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ বেশি সুরক্ষিত হবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে।

ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভার বক্তব্য এবং ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মধ্যকার টানাপোড়েন বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। ডলারের আধিপত্য কমানো এবং বহু মুদ্রার বৈশ্বিক ব্যবস্থার পক্ষে ব্রিকস দেশগুলো দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্কের নতুন রূপ খুঁজে পাওয়া যাবে, যা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক শান্তি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button