ইউটিউবে শেখা কৌশলে মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা দুই যুবক

সাধারণত মানুষ ইউটিউবে গিয়ে শেখে রান্না, কারিগরি কাজ বা পাঠ্যবিষয়ক জ্ঞান। কিন্তু এই দুই যুবক ইউটিউবের ভিডিও দেখে শিখেছিলেন মোটরসাইকেল চুরির কৌশল। কয়েকদিন অনুশীলনের পর বাস্তব মাঠে নেমে প্রথম চেষ্টাতেই ধরা খেলেন তারা। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ শহরে, যেখানে জনতার হাতে ধরা পড়েন এবং পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ হন ওই দুই তরুণ।
প্রথম চেষ্টাতেই ব্যর্থ চুরি
সোমবার (৫ মে) বিকেলে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের দারুশ শেফা প্রাইভেট হাসপাতালের পেছনে একটি লাল রঙের মোটরসাইকেল চুরির চেষ্টা চালান দুই যুবক। মোটরসাইকেলের ঘাড়ের তালা ভাঙতেও সক্ষম হন তারা। তবে হাইড্রোলিক লক ভাঙার সময় স্থানীয় লোকজন তাদের গতিবিধি দেখে সন্দেহ করেন। পর মুহূর্তেই তারা জনতার হাতে ধরা পড়েন।
ভিডিও দেখে কৌশল রপ্ত, কিন্তু বাস্তবতায় হোঁচট
ধরা পড়ার পর তারা অকপটে স্বীকার করেন, ইন্টারনেটে ইউটিউব দেখে চুরির নানা কৌশল শিখেছিলেন তারা। মোটরসাইকেলের তালা ভাঙা, তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ইঞ্জিন চালু করার পদ্ধতি—এসব ভিডিও থেকেই আয়ত্ত করেছিলেন বলে জানান। তবে বাস্তবে তা প্রয়োগ করতে গিয়েই ধরা খেতে হয় তাদের।
আটক দুই যুবকের পরিচয়
আটক দুই তরুণ হলেন—ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বড় গড়িলা গ্রামের ফেটু মিয়ার ছেলে রাসেল হোসেন (২০) এবং একই গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে মিজান হোসেন। স্থানীয়রা জানান, এর আগে তাদের এলাকায় তেমন কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়াতে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ইউটিউব থেকে প্ররোচিত হয়ে প্রথমবারেই তারা চুরির চেষ্টা করেন।
জনতার হাতে ধরা, পুলিশের হস্তক্ষেপ
ঘটনার সময় স্থানীয়দের তৎপরতায় ধরা পড়েন তারা। পরে খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই যুবককে হেফাজতে নেয়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল চুরির জন্য ব্যবহৃত একটি বিশেষ ধরনের চাবিও উদ্ধার করে, যা তারা পূর্বে প্রস্তুত করেছিল।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার জানান, “স্থানীয়রা দুই যুবককে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা তাদের থানায় নিয়ে আসি। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
মোটরসাইকেল মালিক যা বললেন
ভুক্তভোগী মোটরসাইকেল মালিক আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি মোটরসাইকেলটি হাসপাতালে রেখে পাশে কিছু কাজে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন মোটরসাইকেলের ঘাড়ের তালা ভাঙা। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন, দুজন চোরকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এটা আমার চলাফেরার একমাত্র বাহন। এটা চুরি হয়ে গেলে চরম বিপদে পড়তাম। আল্লাহর রহমতে ও জনসাধারণের সচেতনতায় চোর ধরা পড়েছে।”
প্রযুক্তি যখন অপরাধের হাতিয়ার
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, প্রযুক্তি যেমন শিক্ষার দরজা খুলে দেয়, তেমনি তা অপব্যবহারের দ্বারও উন্মুক্ত করে। ইউটিউব ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শেখানোর মতো ভিডিও বহু ক্ষেত্রেই থেকে যাচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এসব কনটেন্ট মনিটর করার দাবি দীর্ঘদিনের, তবে বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ
এ ঘটনার পর স্থানীয়রা তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। তারা মনে করেন, সামাজিক ও পারিবারিক নজরদারি আরও জোরালো করা না গেলে তরুণরা সহজেই ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে—বিশেষ করে যখন অপরাধ শেখার কৌশল হাতের মুঠোয় পাওয়া যায়।