প্রয়াত নির্মাতা আজিজুর রহমানকে একুশে পদক — কন্যার অনুভূতি

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নির্মাতা আজিজুর রহমান প্রয়াত হওয়ার দুই বছর পর তাঁর নাম একুশে পদকের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই সম্মাননার খবরে পরিবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তাঁর কন্যা আলিয়া রহমান বিন্দি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন পোস্টে বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
আজিজুর রহমান: এক জীবন্ত কিংবদন্তি
১৯৩৯ সালের ১০ অক্টোবর বগুড়ার সান্তাহারে জন্মগ্রহণ করেন আজিজুর রহমান। স্থানীয় আহসানুল্লাহ ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করার পর তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউটে কমার্শিয়াল আর্টে ডিপ্লোমা নেন। চলচ্চিত্র জগতে তাঁর পদচারণা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে, এহতেশামের সহকারী হিসেবে।
১৯৬৭ সালে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র সাইফুল মূলক বদিউজ্জামান মুক্তি পায়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি ৫২টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছুটির ঘণ্টা, অশিক্ষিত, মাটির ঘর, জনতা এক্সপ্রেস, সাম্পানওয়ালা, ডাক্তার বাড়ি, গরমিল, এবং সমাধান।
পরিবারের গর্ব ও সন্তুষ্টি
কন্যা আলিয়া রহমানের ভাষায়, ‘বাবা ছিলেন কাজপাগল একজন মানুষ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন। কখনো টাকার জন্য কাজ করতেন না। সব সময় বলতেন, “আমি টাকার পেছনে ছুটব না, এত ভালো কাজ করব যে টাকা আমার পেছনে ছুটবে।”’
আলিয়া রহমান আরও বলেন, তাঁর বাবা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি ছিলেন নিরলস পরিশ্রমী, সহজ-সরল ও নিরহংকার একজন মানুষ। চলচ্চিত্র নির্মাণে বাবার অবদান স্মরণ করে আলিয়া বলেন, তাঁর বাবা কখনো আপস করেননি এবং কোনো স্ক্যান্ডালেও জড়াননি।
শিশুতোষ চলচ্চিত্রে অবদান
আজিজুর রহমানের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে শিশুতোষ ছবিগুলোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অশিক্ষিত চলচ্চিত্রে তিনি দেখিয়েছেন শিক্ষার কোনো বয়স নেই। ছুটির ঘণ্টা ছবিতে সন্তানদের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা দিয়েছেন। এছাড়া রঙিন রূপবান এবং ফুলেশ্বরী গ্রামীণ লোকগাথা ও যাত্রাপালার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে।
একুশে পদক প্রাপ্তিতে পরিবারের প্রতিক্রিয়া
একুশে পদক পাওয়ার পর আলিয়া রহমান ফেসবুকে লেখেন, ‘বাবার এই সম্মান আমাদের পরিবারের জন্য অত্যন্ত গর্বের। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, তাঁর বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তবে অত্যন্ত খুশি হতেন। কারণ, আজিজুর রহমান চলচ্চিত্র জগতে অনেক কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁর নির্মিত ছবিগুলো যুগের পর যুগ আলোচিত হয়েছে। আলিয়ার মতে, বাবার জীবনে কোনো আক্ষেপ ছিল না, কিন্তু সন্তান হিসেবে তাঁদের কিছু আক্ষেপ ছিল। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, অঙ্কন শিল্পী, প্রযোজক, কাহিনিকার, পোস্টার মেকার, সেট ডিজাইনার ও মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে তাঁর অসামান্য অবদান থাকা সত্ত্বেও এতদিন কোনো জাতীয় পুরস্কার পাননি।
চলচ্চিত্র জগতে অবিস্মরণীয় অবদান
আজিজুর রহমানের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো শুধু বিনোদনের উপকরণ নয়, বরং সমাজের নানা বার্তা বহন করেছে। তাঁর সৃষ্টিগুলোয় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও ব্যতিক্রমী গল্প বলার দক্ষতা তাঁকে বিশেষ করে তুলেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি তাই চিরকাল আলোচনায় থাকবেন।
আজিজুর রহমানের প্রতি এই রাষ্ট্রীয় সম্মান তাঁর পরিবারের পাশাপাশি দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছেও গর্বের বিষয়। তাঁর সৃষ্টিগুলো আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।