বাংলাদেশ

হাসপাতালে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া

Advertisement

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রুটিন চেকআপ শেষে রাতেই তাকে বাসায় ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে।

খালেদা জিয়ার হাসপাতালে যাত্রা

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন খালেদা জিয়া। আধঘণ্টারও কম সময়ে তিনি হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার এই ভর্তির মূল উদ্দেশ্য রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রাতেই তাকে বাসায় ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

চিকিৎসক দলের পর্যবেক্ষণ

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় আগে থেকেই একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকেন। চিকিৎসক দল জানায়, বয়সজনিত নানা জটিলতা এবং পূর্বের অসুস্থতার কারণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।

চিকিৎসক ডা. জাহিদ বলেন, “ম্যাডামের স্বাস্থ্য আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। যেহেতু তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, তাই এখন থেকে প্রতিটি রুটিন টেস্ট গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে।”

হাসপাতালে আসার আগে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

খালেদা জিয়ার গাড়িবহর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় তাকে দেখতে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে দলের আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় নেতারা জানান, খালেদা জিয়া যখনই চিকিৎসার জন্য বের হন, তখনই কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। এদিনও তার বাড়ির সামনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

খালেদা জিয়ার পূর্ববর্তী শারীরিক জটিলতা

২০১৮ সালে কারাগারে থাকার সময় থেকেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে তিনি নানা জটিল রোগে ভুগতে শুরু করেন। হৃদরোগ, লিভারের জটিলতা এবং আর্থ্রাইটিসসহ একাধিক সমস্যার কারণে তাকে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।

২০২১ সালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ সময় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে তাকে হাসপাতালে আনা হয় রুটিন চেকআপ ও বিশেষ পরীক্ষার জন্য।

রাজনৈতিক প্রভাব

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন সবসময়ই তীব্র নজর রাখে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতে, তার সুস্থতা দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তিনি অসুস্থ হলে দলীয় কর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ে, আবার তার সুস্থতার খবর পেলে তারা আশাবাদী হয়ে ওঠেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, “খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তার প্রতিটি পদক্ষেপ বিএনপির ভেতর এবং বাইরে তাৎপর্য বহন করে। তাই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষাও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।”

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বিএনপির প্রেস উইং জানিয়েছে, চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলের ভেতরে নিয়মিতভাবে আলোচনা হয়। দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা চিকিৎসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ম্যাডামের সুস্থতাই আমাদের সবচেয়ে বড় চাওয়া। তিনি সুস্থ থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনও শক্তিশালী হবে।”

জনগণের প্রত্যাশা

খালেদা জিয়ার সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন। অনেকেই লিখেছেন, “দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য খালেদা জিয়া সুস্থ থাকাটা জরুরি।”

ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া মাহফিল করেছেন।

শেষ কথা 

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে দেশের জনগণ, রাজনৈতিক মহল ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও সবসময় উদ্বিগ্ন থাকেন। বৃহস্পতিবারের এই স্বাস্থ্য পরীক্ষা তার জন্য একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া হলেও তা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

চিকিৎসকরা আশাবাদী যে খালেদা জিয়া পরীক্ষার পর রাতেই বাসায় ফিরতে পারবেন। তবে তিনি সুস্থ হয়ে কতটা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন, তা সময়ই বলে দেবে।

এম আর এম – ১০৮০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button