ভক্ত কারারক্ষীদের সঙ্গে জেলে নিজের ছবি দেখেছিলেন রাসুলফ
ইরানের খ্যাতনামা পরিচালক মোহাম্মদ রাসুলফ সম্প্রতি একটি চলচ্চিত্র উৎসবে তার জেল জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। ইরানে সরকারের সমালোচনা করায় তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জেলে থাকার সময় তিনি কিছু ভক্তের সঙ্গে দেখা করেন, যারা তার সিনেমা ‘দেয়ার ইজ নো এভিল’ তার সঙ্গে বসে দেখতে চান।
জেলে ভক্তদের সঙ্গে দেখা
গোথেনবার্গ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে রাসুলফ বলেন, “জেলে থাকার সময় আমি বিছানায় শুয়ে নানা চিন্তা করতাম। একদিন কারারক্ষী এসে বললেন, ‘আপনি দারুণ সিনেমা বানিয়েছেন, আপনাকে অভিবাদন।’ পরে তিনি জানান, তিনি আমার সঙ্গে সিনেমা দেখতে চান।”
রাসুলফ বুঝতে পারেন, সেই কারারক্ষী কেবল কথার কথা বলছেন না, বরং সিনেমা দেখার জন্য পরিকল্পনা করছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না এবং অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। মাথায় আট বছরের দণ্ড এবং সরকারের হুমকি নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন যে, জেলে সিনেমার প্রদর্শনী নতুন বিপদ ডেকে আনবে কি না।
‘দেয়ার ইজ নো এভিল’ সিনেমার বিষয়বস্তু
‘দেয়ার ইজ নো এভিল’ সিনেমাটি চারটি গল্প নিয়ে গঠিত, যেখানে ইরান সরকারের সমালোচনা এবং স্বাধীনচেতা মানুষের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্বের নামেই সিনেমার নাম ‘দেয়ার ইজ নো এভিল’। এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে, কিভাবে ইরান সরকার বিরোধীদের দমন করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।
সিনেমা দেখার উদ্যোগ
জেলে থাকা ভক্তরা নাছোড়। তারা সিনেমাটি দেখার নানা উপায় খুঁজতে থাকেন। একদিন রাসুলফ দেখেন, গার্ডদের একজন ইউএসবি পোর্টে সিনেমাটির কপি নিয়ে এসেছেন। গার্ডরা নিশ্চিত করে যে, কেউ বিষয়টি জানতে পারবে না। এরপর মধ্যরাতে তারা একসঙ্গে সিনেমাটি দেখেন।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
‘দেয়ার ইজ নো এভিল’ সিনেমার জন্য ২০২০ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণভালুক পুরস্কার জেতেন রাসুলফ। ২০২২ সালে ইরানে বিক্ষোভ শুরু হলে তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলেন। আন্দোলনকে উসকে দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু পরে মুক্তি দেওয়া হয়।
নতুন সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’
রাসুলফের নতুন সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প নিয়ে নির্মিত। এই সিনেমায় একজন সরকারি কর্মকর্তার মানসিক দ্বন্দ্ব এবং তার দুই মেয়ের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা তুলে ধরা হয়েছে। গত বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে এই সিনেমা বিশেষ জুরি পুরস্কার জেতে।
ইরান থেকে পালিয়ে আসা
ইরান সরকার রাসুলফকে চাপ দিতে থাকে যাতে তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে তার সিনেমাটি প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। একসময় তাকে দেশ থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হতে হয়। বর্তমানে তিনি জার্মানিতে বাস করছেন এবং তার সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য স্যাক্রেড ফিগ’ অস্কারে পাঠানো হয়েছে।
মোহাম্মদ রাসুলফের জীবন ও কাজের গল্প আমাদের দেখায় যে, সৃজনশীলতা এবং সাহসের মাধ্যমে একজন শিল্পী কিভাবে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। তার সিনেমাগুলো শুধু বিনোদন নয়, বরং সমাজের বাস্তবতা ও সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা।