বিনোদন

মানবতা বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: ‘ট্রন: অ্যারেস’ মুক্তি পাচ্ছে দেশের পর্দায়

Advertisement

আগামী শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর দেশে স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন-অ্যাকশন সিনেমা ‘ট্রন: অ্যারেস’, যা ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ট্রন: লিগ্যাসি’র সিক্যুয়েল। এটি ‘ট্রন’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তি, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানবতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জোয়াকিম রনিং, আর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জ্যারেড লেটো, গ্রেটা লি, ইভান পিটার্স, জোডি টার্নার-স্মিথ, হাসান মিনহাজ, আর্তুরো কাস্ত্রো, গিলিয়ান অ্যান্ডারসন সহ আরও অনেকে।

‘ট্রন’ ফ্র্যাঞ্চাইজির উত্থান ও বিবর্তন

‘ট্রন’ ফ্র্যাঞ্চাইজিটি প্রথম মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে, যা সায়েন্স ফিকশন সিনেমার জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এরপর ২০১০ সালে ‘ট্রন: লিগ্যাসি’ মুক্তি পায়, যা আগের গল্পের ধারাবাহিকতাকে আধুনিক প্রযুক্তি এবং ভিজ্যুয়াল এফেক্টের সঙ্গে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরে।

ফ্র্যাঞ্চাইজির নির্মাতা স্টিভেন লিসবার্গার ২০১০ সালের অক্টোবরে ‘ট্রন: লিগ্যাসি’র সিক্যুয়েল তৈরির কাজ শুরু করেন। তবে ২০১৭ সালে জানা যায়, সিক্যুয়েলের পরিবর্তে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি একটি সফট রিবুটের দিকে এগিয়ে যাবে।

রিবুট প্রক্রিয়ায় ‘অ্যারেস’ নামে একটি নতুন চরিত্র যোগ করা হয়, যাকে অভিনয় করবেন জ্যারেড লেটো। এই চরিত্রটি মূলত ‘অ্যাসেনশন স্ক্রিপ্ট’-এর পূর্ববর্তী সংস্করণ থেকে সংরক্ষিত ছিল। নির্মাতারা মূল গল্পের ভাবধারার সাথে নতুন গল্পের সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন, যা মানবতা ও প্রযুক্তির সম্পর্কের গভীর প্রশ্ন তুলে ধরে।

নির্মাণ ও প্রযোজনার চ্যালেঞ্জ

২০২০ সালের আগস্টে স্ক্রিপ্টের কাজ চলাকালীন গার্থ ডেভিস পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন, কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর এক মাসের মধ্যেই জোয়াকিম রনিং পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন।

প্রযোজনা শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের আগস্টে, কিন্তু রাইটার্স গিল্ড অফ আমেরিকার ধর্মঘটের কারণে তা বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভ্যাঙ্কুভারে ছবির চিত্রগ্রহণ শুরু হয় এবং মে মাসে এটি শেষ হয়।

আধুনিক যুগের গল্প: মানব বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

ডিজনি ৪৫ বছরের পুরোনো এই সাই-ফাই সিরিজকে নতুনভাবে রিবুট করতে চেয়েছে। গল্পের মূল থিম হিসেবে এসেছে মানব নৈতিকতা, প্রযুক্তির প্রভাব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমা

কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন অ্যারেস, একটি অত্যন্ত উন্নত ‘প্রোগ্রাম’, যা ভার্চুয়াল জগৎ ‘গ্রিড’ থেকে বাস্তব জগতে পাঠানো হয়। তার মিশন মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন, কিন্তু যোগাযোগের ধরণ শান্তিপূর্ণ নয়।

গবেষকরা অ্যারেসকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে এটি মানুষের বুদ্ধিমত্তার বাইরে শক্তিশালী ক্ষমতা রাখে। অ্যারেসের প্রধান কাজ হলো মানব ও প্রোগ্রাম দুই জগতের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা, কিন্তু বাস্তব জীবনে এসে সে অনুভব করে মানুষ তাকে ভয় পায় এবং ধ্বংস করতে চায়।

এখান থেকেই শুরু হয় গল্পের মূল দ্বন্দ্ব: অ্যারেস কি মানবতার পক্ষে লড়বে, নাকি নিজের প্রজাতির স্বাধীনতা রক্ষার পথে চলবে? এটি শুধু একটি অ্যাকশন সিনেমা নয়, বরং মানবতার সীমা, প্রযুক্তির প্রভাব এবং নৈতিকতার প্রশ্ন নিয়ে দর্শককে ভাবায়।

চরিত্র ও অভিনয়

জ্যারেড লেটো অ্যারেস চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যেখানে তাকে দেখতে হবে মানব ও যান্ত্রিক জীবনের মধ্যকার দ্বন্দ্বে

গ্রেটা লি, ইভান পিটার্স, এবং জোডি টার্নার-স্মিথ অন্যান্য মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও হাসান মিনহাজ এবং গিলিয়ান অ্যান্ডারসন গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্রে রয়েছেন।

চিত্রনাট্য, ভিজ্যুয়াল এফেক্টস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোজন সিনেমাটিকে এক আধুনিক ও প্রফেশনাল রূপ দিয়েছে।

প্রযুক্তি ও দর্শকদের জন্য বার্তা

‘ট্রন: অ্যারেস’ কেবল বিনোদন দিচ্ছে না, এটি প্রযুক্তি ও মানবতার সম্পর্কের মূল প্রশ্নও তুলে ধরছে। সিনেমার মাধ্যমে দর্শকরা জানতে পারবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানবজাতির জন্য হুমকি, নাকি এটি মানবতার সহায়ক হতে পারে।

ডিজনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন একটি সিনেমা তৈরি করেছে, যা কেবল ভিজ্যুয়াল এফেক্ট নয়, বরং মানবিক ও নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার প্রতিদিন বাড়ছে। ব্যাংক, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা—প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ‘ট্রন: অ্যারেস’-এর গল্প দর্শককে সমসাময়িক বাস্তবতার সঙ্গে সংযুক্ত করে

এছাড়াও, সিনেমায় দেখানো হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের সৃজনশীলতা এবং নৈতিকতার বাইরে কাজ করলে তার প্রভাব কতটা বিস্তৃত হতে পারে।

মুক্তির প্রতীক্ষা ও দর্শক প্রতিক্রিয়া

মুক্তির আগে থেকেই ‘ট্রন: অ্যারেস’ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে জ্যারেড লেটো’র অভিনয় এবং ভিজ্যুয়াল এফেক্টসকে প্রশংসা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাওয়ায়, দর্শকরা দেশে আধুনিক সায়েন্স ফিকশন অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন। সিনেমাটি কেবল তরুণ প্রজন্মের জন্য নয়, বরং প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আগ্রহী সকলের জন্য আকর্ষণীয়।

‘ট্রন: অ্যারেস’ হল মানবতা বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্মিত এক আধুনিক সায়েন্স ফিকশন সিনেমা। এর গল্প, ভিজ্যুয়াল এফেক্টস, অভিনয় এবং নৈতিক দৃষ্টিকোণ একত্রে এটি দর্শকের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে।

সিনেমার মাধ্যমে আমরা প্রশ্ন করতে শিখব:

  • প্রযুক্তি কতটা মানব জীবনের নিয়ন্ত্রণে?
  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানবতার জন্য হুমকি, নাকি বন্ধু?
  • মানবিক নৈতিকতা ও যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সীমা কী?

আগামী শুক্রবার থেকে স্টার সিনেপ্লেক্স-এ সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের দর্শকরা একটি নতুন ভিজ্যুয়াল ও নৈতিক অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে পারবেন।

MAH – 13331 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button