বিনোদন

আবরার ফাহাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী: গান, ডকুমেন্টারি ও স্মৃতিচারণ

Advertisement

পালিত হলো সত্য এবং ন্যায়ের পথে অবিচল বুয়েট শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদ-এর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। শহীদ আবরার ফাহাদের স্মরণে এই বছরও বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যেখানে তার জীবন, সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ন্যায়ের প্রতিশ্রুতির প্রতি অবিচল ভক্তি তুলে ধরা হয়।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে স্মরণ অনুষ্ঠান

শহীদ আবরার ফাহাদের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অনুষ্ঠানটি সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় ধানমণ্ডি রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে, যেখানে শহীদ আবরারের জীবন ও সংগ্রামের ওপর একটি আলোচনা সভা এবং ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল ‘আবরার ফাহাদ: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নতুন প্রতীক ও আমাদের সংস্কৃতি’

এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল শহীদ আবরারের সাহস, ন্যায়ের প্রতি অবিচল ভক্তি এবং তার দেশের প্রতি আত্মনিবেদনকে উপজীব্য করে নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’। একইসাথে, দেশের সব জেলা শিল্পকলা একাডেমিতেও একযোগে এই ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

সভাপতির বক্তব্য

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন) অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন,

“আবরার ভীরু ছিলেন বলে পরিবার জানত, কিন্তু যে দেশকে ভালোবাসে, যে মানুষের জন্য দাঁড়ায়, সে ভীরু থাকতে পারে না। আবরারও তাই সাহসী হয়ে উঠেছিল। তার মৃত্যুর পেছনে যে সত্য প্রকাশের চেষ্টার কারণ ছিল, তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেশের প্রতি তার অবিচল ভালোবাসা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ।”

পিতার আবেগঘন স্মৃতিচারণ

শহীদ আবরার ফাহাদের পিতা মো. বরকত উল্লাহ তার বক্তৃতায় বলেন,

“ছোটবেলায় আবরার ভীতু ছিল। কিন্তু সে দেশকে বাঁচাতে সাহসী হয়ে উঠেছিল। তার লেখা ও স্ট্যাটাসগুলো পরিবারের জন্য অচিন্তনীয় ছিল। আমরা জানতাম না যে সে এমন সাহসী কাজ করবে। দেশের জন্য আমাদের সবাইকে তার জন্য প্রার্থনা করতে হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আবরার দেশের জন্য যা করেছিল, তা সত্যিই গর্বের। তার স্মৃতি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে অম্লান থাকবে।”

মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পী রাফি তালুকদার শিল্পী হায়দার হোসেন রচিত গান ‘আমি চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার’ পরিবেশন করেন। গানটি শহীদ আবরারের জীবন ও সংগ্রামের আবেগকে ফুটিয়ে তোলে।

আলোচনা শেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীবৃন্দ সমবেত কণ্ঠে বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করেন, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’
  • ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’
  • ‘কারার ঐ লোহ কপাট’
  • ‘ও আলোর পথযাত্রী’
  • ‘মোরা ঝঞ্জার মত উদ্দাম’

এই গানসমূহ শহীদ আবরারের সাহস ও ত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী: ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল আবরারের জীবনের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’। ডকুমেন্টারিটি আবরারের সাহসী কর্ম, তার লেখা, এবং সমাজ ও দেশের প্রতি তার দায়বদ্ধতা তুলে ধরে। এটি শুধু স্মরণ অনুষ্ঠান নয়, বরং নতুন প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষণীয় উপায়ও হিসেবে কাজ করে।

দেশের প্রতিটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে একযোগে ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হওয়ার মাধ্যমে আবরারের প্রতি দেশের সর্বত্র সমান শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হয়েছে।

শহীদ আবরারের জীবন ও ত্যাগের প্রভাব

শহীদ আবরার ফাহাদের জীবন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সমাজে একটি চিরস্থায়ী প্রতীক। তার মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি ন্যায় ও সত্যের পথে দাঁড়ানোর প্রেরণাও। আবরারের হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী শিক্ষার্থী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা এখনও প্রজন্মকে প্রেরণা জোগায়।

শহীদ আবরারের গল্প থেকে জানা যায় যে, ভয় পেতেও সাহসী হওয়া সম্ভব। তার আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা কতটা মহান কাজ।

শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান

অনুষ্ঠানে বক্তারা নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আবরারের মতো সত্যের পথে দাঁড়ান। সমাজে অবিচারের বিরুদ্ধে শব্দ উঠান। দেশপ্রেম ও মানবিকতার জন্য সংগ্রাম করুন। আবরারের জীবন আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।”

শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠান থেকে ন্যায়, সাহস এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার মূলমন্ত্র শিখেছে। এটি একটি শিক্ষা নয়, বরং দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকার আহ্বানও।

সার্বিক ভাবনা

শহীদ আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণ অনুষ্ঠান দেশের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাজগতকে নতুনভাবে সংহত করেছে। গান, আলোচনা, এবং ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী একত্রিত হয়ে একটি অনন্য প্রভাব ফেলেছে। আবরারের জীবন, সাহস, এবং তার দেশের জন্য নিবেদন প্রজন্মের জন্য চিরস্মরণীয় শিক্ষা হিসেবে রয়ে গেছে।

এ ধরনের অনুষ্ঠান শুধু স্মরণে সীমাবদ্ধ নয়, বরং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার এক শক্তিশালী মাধ্যম। শহীদ আবরারের নাম বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সমাজে চিরকাল অম্লান থাকবে এবং তার ত্যাগ ও সাহসের গল্প দেশপ্রেম ও ন্যায়ের পথপ্রদর্শক হিসেবে আগামীর প্রজন্মকে পথ দেখাবে।

MAH – 13225 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button