বিশ্ব

কিম জং-উনের রাশিয়ার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ইউক্রেন ইস্যুতে

Advertisement

উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-উন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার যেকোনো পদক্ষেপে পিয়ংইয়ং-এর থাকবে ‘নিঃশর্ত সমর্থন’। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠকে কিম এই বক্তব্য দেন। এতে আরও সুদৃঢ় হলো রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত সামরিক সম্পর্ক।

গত কয়েক বছরে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার মুখে একে অপরের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া। বিশেষ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এই সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

রাশিয়ার মিত্র হিসেবে দৃঢ় অবস্থানে কিম জং-উন

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ-এর বরাতে জানা গেছে, কিম জং-উন বলেছেন—”ইউক্রেন সংকটে রাশিয়ার যেকোনো সামরিক, রাজনৈতিক বা কৌশলগত সিদ্ধান্তকে আমরা নিঃশর্তভাবে সমর্থন জানাই এবং ভবিষ্যতেও রাশিয়ার পাশে দৃঢ়ভাবে থাকব।”

তিনি আরও বলেন, “রুশ নেতৃত্ব যে পথে অগ্রসর হচ্ছে, সেটিই সঠিক পথ। আমরা রাশিয়ার জয় ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”

সামরিক চুক্তি ও যৌথ প্রতিরক্ষা উদ্যোগ

সের্গেই লাভরভের তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের অংশ হিসেবে কিম জং-উনের সঙ্গে বৈঠক হয় উত্তর কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল শহর ওনসান-এ। পাশাপাশি লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চোয়ে সন হুই। সেখানে গত বছর স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব চুক্তির অধীনে ভবিষ্যতের যৌথ উদ্যোগ ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।

এই অংশীদারিত্ব চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা অনুযায়ী যেকোনো একটি দেশ আক্রান্ত হলে অপর দেশ তার পক্ষে প্রতিরোধে অংশ নেবে।

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা

বিশ্বের বিভিন্ন গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে ইতিমধ্যে উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১০,০০০ সেনা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। তাদের অবস্থান রাশিয়ার দোনবাস, লুহানস্ক এবং কুরস্ক অঞ্চলে। কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই সেনাদের মধ্যে অনেকেই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং ভারী অস্ত্র ব্যবহারেও পারদর্শী।

এছাড়া উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে সরবরাহ করছে রকেট, আর্টিলারি শেল, ছোট অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব অস্ত্র ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা রয়েছে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আর অভিন্ন শত্রু – ঘনিষ্ঠতার কারণ

রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া উভয় দেশের ওপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার জালে বন্দি এই দুটি রাষ্ট্র এখন একে অপরের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা তাদের কৌশলগত বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিম ও পুতিনের সম্পর্ক এখন শুধু কৌশলগত নয়, বরং তা ভবিষ্যতের যুদ্ধ-নীতি ও প্রতিরক্ষা জোট গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি বিশ্ব রাজনীতিতে একটি উদ্বেগজনক পরিবর্তন।

অন্তরঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক: রাজনৈতিক বার্তা বিশ্বকে

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা গেছে, কিম জং-উন ও সের্গেই লাভরভ একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। এটি বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে বার্তা দিচ্ছে—মস্কো-পিয়ংইয়ং সম্পর্ক এখন কেবল বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, বরং তা রাজনৈতিক ও সামরিক স্তরেও গভীর।

এই আলিঙ্গন ও আন্তরিক অভ্যর্থনা ছিল নিছক কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী বার্তা—‘আমরা একসাথে, পশ্চিমের বিরুদ্ধে’

বিশ্লেষণ: বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন শক্তি সংযুক্তি

বিশ্বরাজনীতি এখন দ্বিধাবিভক্ত—একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট, অন্যদিকে রাশিয়া, চীন ও তাদের মিত্রগণ। উত্তর কোরিয়ার রাশিয়ার প্রতি এই নিঃশর্ত সমর্থন একটি নতুন ত্রিমুখী শক্তি সংযুক্তির ইঙ্গিত দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার সেনা ও অস্ত্র সহায়তা শুধু ইউক্রেন যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি হতে পারে ভবিষ্যতের আঞ্চলিক সংঘর্ষের পূর্বাভাস।

পশ্চিমাদের উদ্বেগ ও নিরাপত্তা হুমকি

পশ্চিমা বিশ্বের কূটনীতিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, উত্তর কোরিয়ার এই ভূমিকা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশেষ করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, পিয়ংইয়ং অস্ত্র রপ্তানি ও সেনা মোতায়েন করছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী বলে দাবি করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

কিম জং-উনের স্পষ্ট বার্তা ও সের্গেই লাভরভের সফর প্রমাণ করে যে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া সম্পর্ক এখন অত্যন্ত শক্তিশালী ও আস্থানির্ভর। ইউক্রেন যুদ্ধ এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

যদিও এই বন্ধুত্ব বিশ্ব রাজনীতির জন্য আশঙ্কাজনক, কিন্তু এটি একটি বাস্তবতা—যা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button