সালমান শাহ’র স্মরণে যা বললেন শাকিব খান

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যদি কারও নাম অমর অক্ষরে লেখা থাকে, তবে নিঃসন্দেহে তিনি সালমান শাহ। মাত্র ২৪ বছরের জীবনে তিনি যে আলো ছড়িয়ে গিয়েছিলেন, তা এখনও কোটি ভক্তের হৃদয়ে জ্বলে আছে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই থেমে যায় তার জীবনের গতি। আজ (৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫) তার ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিন দশক পেরিয়ে গেলেও সালমান শাহর জনপ্রিয়তা, তার স্টাইল, তার অভিনয়ের জাদু আজও অমলিন।
আজকের দিনে দেশের সিনেমাপ্রেমীরা আবারও তাকে স্মরণ করছেন ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়। শুধু ভক্তরাই নন, বর্তমান ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানও সালমান শাহকে স্মরণ করেছেন আবেগঘন বার্তায়।
শাকিব খানের শ্রদ্ধা নিবেদন
বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান রাজত্বধারী নায়ক শাকিব খান শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। তিনি তার নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস এর তৈরি একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেছেন। কার্ডটিতে সালমান শাহর তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ছবি কোলাজ করা হয়েছে, আর লেখা আছে— ‘স্মরণে অমর নায়ক সালমান শাহ’।
স্ট্যাটাসে শাকিব খান লিখেছেন:
“যেখানেই থাকুন, আপনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।”
শাকিবের এই আবেগঘন পোস্ট মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ভক্তরা কমেন্টে দুই নায়ককেই ভালোবাসায় ভরিয়ে দেন। একজন লিখেছেন— “প্রতিটা ভক্তের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন প্রিয় অমর নায়ক সালমান শাহ।”
সালমান শাহ: জীবনের শুরু থেকে তারকাখ্যাতি
সালমান শাহর জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সিলেটের দাড়িয়া পাড়ায়। প্রকৃত নাম মোহাম্মদ শাহীদুর রহমান শাহীন। তিনি ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড়। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় ও সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক ছিল তার।
অভিনয়ে প্রথম পদচারণা
অভিনয়ের শুরু হয় টেলিভিশন নাটক দিয়ে। ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে তিনি নাটকে অভিনয় করলেও বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে ১৯৯৩ সালে, সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে। এই সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন তৎকালীন নবাগতা মৌসুমী। প্রথম সিনেমাতেই তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
মাত্র ৩ বছরে ২৭টি সিনেমা
সালমান শাহর ক্যারিয়ার ছিল মাত্র তিন বছরের, কিন্তু এই স্বল্প সময়ে তিনি ২৭টিরও বেশি সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
- কেয়ামত থেকে কেয়ামত
- সুখের সংসার
- প্রেমযুদ্ধ
- অনন্ত ভালোবাসা
- দিনকাল
- চাওয়া থেকে পাওয়া
- তুমি আমার
- স্বপ্নের ঠিকানা
প্রতিটি সিনেমাই ছিল বাণিজ্যিক সাফল্যের প্রতীক।
সালমান শাহর স্টাইল: ফ্যাশন আইকন থেকে কালচারাল আইকন
৯০-এর দশকে তিনি শুধু নায়ক ছিলেন না, ছিলেন একটি ফ্যাশন আইকন। তার স্টাইল আজও ট্রেন্ডে থাকে।
- মাথায় ব্যান্ডেনা
- চোখে সানগ্লাস
- বাইক রাইডিং
- ঘন কালো চুল
- হাসির মধ্যে মায়া
এই লুক এবং সরল অথচ আত্মবিশ্বাসী অভিনয় তাকে করে তুলেছিল তরুণ প্রজন্মের অনুকরণীয়।
মৃত্যুর দিন ও রহস্য
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তৎকালীন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে এটি আত্মহত্যা। কিন্তু এই মৃত্যু নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে।
অনেকে বিশ্বাস করেন, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যা। সালমান শাহর পরিবারও দাবি করেছিল, তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। একাধিক তদন্ত হলেও এখনও পর্যন্ত রহস্যের সমাধান হয়নি।
এই রহস্যই তাকে নিয়ে ভক্তদের কৌতূহল আরও বাড়িয়েছে। ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো তার মৃত্যুর রহস্য নিয়ে নানা আলোচনা, বিশ্লেষণ চলে।
ভক্তদের আবেগ: আজও অমর নায়ক
২৯ বছর কেটে গেছে, কিন্তু আজও সালমান শাহ বাংলা সিনেমার অমর নায়ক। তার জনপ্রিয়তা সময়ের সাথে কমেনি, বরং বেড়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক—সব জায়গায় এখনও তার ক্লিপ ভাইরাল হয়। নতুন প্রজন্মও তার গান ও সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়।
আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভক্তরা লিখছেন—
- “বাংলা সিনেমার রাজা ছিলেন সালমান শাহ, থাকবেন চিরকাল।”
- “একজন অভিনেতা নয়, তিনি একটি অনুভূতি।”
বাংলা সিনেমায় সালমান শাহর অবদান
বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান শাহ যে পরিবর্তন এনেছিলেন তা অনন্য। তিনি ছিলেন রোমান্টিক হিরোর নতুন সংজ্ঞা। তার আগ পর্যন্ত নায়কদের স্টাইল ছিল ভিন্ন, কিন্তু সালমান শাহ তরুণদের কাছে সিনেমাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন।
সালমান শাহ চলে গেছেন বহু বছর আগে, কিন্তু তার নাম, তার কাজ, তার ব্যক্তিত্ব আজও বেঁচে আছে। বর্তমান প্রজন্মের শাকিব খানও তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। এটাই প্রমাণ করে যে সালমান শাহ ছিলেন, আছেন, থাকবেন—বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক।
MAH – 12658, Signalbd.com