বিনোদন

হাইকোর্টের রায়ে মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি—দুইজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যে সংশয় বহু বছর ধরে চলছিল, তা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে আরও স্পষ্টতই প্রকাশ পেল। দিল্লি হাইকোর্ট সোমবার (২৬ আগস্ট) এ ধরনের মামলায় রায় ঘোষণা করে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য প্রকাশ করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়।

এই রায়ের মাধ্যমে আবারও আলোচনায় এসেছে নরেন্দ্র মোদির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সত্যতা, যা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। একই সঙ্গে সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি-এর দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফল প্রকাশের দাবিও আদালতের রায়ে স্থগিত হলো।

হাইকোর্টের যুক্তি

বিচারপতি সচিন দত্ত রায়ে বলেন, ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা একটি ব্যক্তিগত তথ্য, যা সর্বজনীন করা উচিত নয়। এমন তথ্য তথ্য জানার অধিকার আইন (RTI Act) এর আওতায় পড়ে না। বিচারপতি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা বাধ্যতামূলক নয়, তাই জনস্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে এই তথ্য প্রকাশের প্রয়োজন নেই।

হাইকোর্টের এই রায়ে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ডিগ্রির সত্যতা প্রকাশের দাবিটি আইনগত বা জনস্বার্থের প্রশ্ন নয়, বরং রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কৌতুহলই এর মূল কারণ।

মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের ইতিহাস

নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ১১ বছর ধরে নানা প্রশ্ন উঠছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এই বিতর্ক অব্যাহত।

  • গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মোদি নিজেই উল্লেখ করেছিলেন যে, কৈশোরে গৃহত্যাগের কারণে তিনি পুরোপুরি স্কুল শেষ করতে পারেননি।
  • তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসার পর জানা যায়, তিনি গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (পলিটিক্যাল সায়েন্স) এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (পলিটিক্যাল সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

তবে এই ডিগ্রির প্রসঙ্গে নানা বিস্ময়কর অসঙ্গতি দেখা যায়:

  1. নির্বাচনী হলফনামায় মোদি উল্লেখ করেছিলেন, ১৯৭৮ সালে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স’ে তৃতীয় ডিভিশনে বিএ পাস করেছেন। তবে ইতিহাসে এমন কোনো বিষয় পড়ানো হয়নি।
  2. মোদি যে ডিগ্রির প্রশংসাপত্র দেখিয়েছেন, তা ছাপানো, অথচ সেই প্রশংসাপত্রের ফন্ট এবং নকশা ১৯৯২ সালে তৈরি হওয়া ফন্টের সাথে মেলে, যা সময়কালগতভাবে অসঙ্গত।
  3. গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮৩ সালে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাস করার দাবি করেছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাধীন সাংবাদিক সমাজ এই দাবি যাচাই করতে সমস্যায় পড়েছে।

এসব কারণে মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে জনমনে সংকেতমূলক সংশয় তৈরি হয়েছে।

স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা বিতর্ক

স্মৃতি ইরানি—যিনি বহু বছর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন—তার স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে এসেছে।

  • ইরানির দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফল প্রকাশের দাবিতে একাধিক RTI আবেদন করা হয়েছিল।
  • কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (CIC) সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে এই ফলাফল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল, তবে সেন্ট্রাল বোর্ড অব স্কুল এডুকেশন (CBSE) এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষ তা মানেনি।

হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট করা হয়েছে, ব্যক্তিগত তথ্যের রক্ষার অধিকার প্রাধান্য পায়, এবং জনস্বার্থের ভিত্তিতে এই ধরনের তথ্য প্রকাশ করা যায় না।

RTI ও তথ্য প্রকাশের মামলা

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশের দাবিতে অনেকেই RTI (Right to Information) আইনের আশ্রয় নিয়েছিলেন।

  • দিল্লি মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশের দাবি করেছিলেন।
  • কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে এই ডিগ্রি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল।
  • গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় এটি মানেনি। ফলে কেজরিওয়াল গুজরাট হাইকোর্টে মামলা করেন।

হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল স্পষ্ট: কেজরিওয়ালের দাবি জনস্বার্থের নয়, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে ডিগ্রি ইতিমধ্যেই ওয়েবসাইটে উপলব্ধ। আদালত কেজরিওয়ালকে ২৫ হাজার রুপি জরিমানা করেছিল।

সরকারি দিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান

গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের মামলায় বলেছে:

  • শিক্ষাগত তথ্য প্রকাশের ফলে হাজার হাজার ছাত্রের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে।
  • বিশ্ববিদ্যালয় যে ডিগ্রি জারি করে, তা যথাযথভাবে সংরক্ষিত। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হলে প্রকাশ করা যাবে না।

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, আদালতের কাছে প্রয়োজনীয় নথি দাখিল করা সম্ভব। তবে রাজনৈতিক বা জনপ্রিয়তার কারণে প্রকাশের দাবি মানা যায় না।

জনমনে প্রভাব

এই বিতর্ক ভারতীয় রাজনীতিতে এক দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

  1. রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ: মোদি ও ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে।
  2. সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ: শিক্ষাগত তথ্যের স্বচ্ছতা চাওয়া হয়েছে, কিন্তু আদালত তা অপ্রয়োজনীয় বলে ঘোষণা করেছে।
  3. আইনগত প্রেক্ষাপট: RTI আইন ব্যক্তিগত তথ্যের প্রকাশের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।

এই পরিস্থিতিতে মোদি ও ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে রহস্য এখনও অমীমাংসিত।

প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ

  • প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি জনস্বার্থের বিষয় না হলেও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
  • তথ্যের স্বচ্ছতা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার মধ্যে সমন্বয় থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলো নিয়ম মেনে কাজ করলে বিতর্ক কিছুটা কমানো সম্ভব।

দিল্লি হাইকোর্টের রায় পরিস্কার করে দিয়েছে যে, নরেন্দ্র মোদি বা স্মৃতি ইরানি-র শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশের দাবি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়। আদালত ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার প্রাধান্য দিয়েছে।

  • জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়।
  • বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের নথি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
  • জনমনের কৌতূহল থাকলেও তা আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়।

এই রায় মোদি ও ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত দীর্ঘ বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যদিও জনমনে সংশয় থেকে যায়, তবে আইনি দিক থেকে এই বিতর্ক এখন সমাপ্ত বা স্থগিত

MAH – 12497 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button