বিনোদন

জানুন ভাইজানের ‘নো কিস পলিসি’র পেছনের গল্প

বলিউডের অন্যতম সুপারস্টার, সালমান খান — যিনি তার শক্তিশালী অভিনয় ও ব্যক্তিত্বের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত — তিনি পর্দায় কখনোই নায়িকাদের সঙ্গে চুম্বনের দৃশ্যে দেখা যায় না। এই ‘নো কিসিং পলিসি’ অনেকের কৌতূহলের বিষয় হলেও, ভাইজান নিজেই এ নিয়ে স্পষ্ট ও সাহসী অবস্থান নিয়েছেন বহুবার। আসুন আজ আমরা এই বিশেষ বিষয়টির পেছনের কারণ ও সালমানের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

সালমান খানের ‘নো কিসিং পলিসি’: কেন পর্দায় চুম্বন করেন না ভাইজান?

বলিউডে চুম্বনের দৃশ্য অনেক সময় সিনেমার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সালমান খান এই ট্রেন্ড থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বাস্তব জীবনেও বহু নারী তার প্রেমিকা হলেও পর্দায় একবারও কোনো নায়িকাকে চুমু খাওয়ার দৃশ্যে দেখা যায়নি তাঁকে। কেন এমন?

২০১৯ সালের একটি জনপ্রিয় টিভি শোতে, যেখানে সালমান তাঁর ভাই আরবাজ খান ও সোহেল খানকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন, তখন কপিল শর্মা প্রশ্ন করেন এই ‘নো কিসিং পলিসি’র পেছনের রহস্য। সোজাসাপটা উত্তর দেন সালমান, “আমি পর্দায় নায়িকাকে চুমু খাই না। তবে এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।”

এখানেই শেষ নয়, ভাই আরবাজ খান হাসতে হাসতে যোগ করেন, “আসলে ও অফস্ক্রিন এত বেশি চুমু খায় যে অনস্ক্রিন আর খাওয়ার দরকার পড়ে না।” এই মজার মন্তব্যে নিজেকে সামলাতে না পেরে সালমান খান একটু লজ্জিত হলেও মিষ্টি হাসি ছড়ান।

সালমানের ক্যারিয়ারে একবারই ভাঙেন ‘নো কিস পলিসি’

১৯৯৭ সালের জনপ্রিয় ছবি ‘জিত’— যেখানে কারিশমা কাপুরের বিপরীতে সালমানকে দেখা গিয়েছিল— এই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে তিনি চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু এটি ছিল তার একমাত্র পর্দায় চুম্বনের দৃশ্য, যা পরবর্তীতে তিনি আর কখনো করেননি।

এরপর থেকে সালমান খান নিজের এই নীতিকে অটুট রেখেছেন। ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ ছবিতে ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে জুটি বেঁধেও তিনি চুম্বনের দৃশ্য থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকেন। পরিচালক যেহেতু এই দৃশ্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন, তাঁকে অনুরোধও জানিয়েছিলেন, কিন্তু সালমান রাজি না হওয়ায় সেই দৃশ্যটি সম্পূর্ণ বাদ পড়েছিল।

ভাইজানের এই নীতির পিছনের কারণ কী?

সালমান খান নিজে জানিয়েছিলেন, পর্দায় চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় করার ব্যাপারে তিনি স্বচ্ছন্দ নন। তিনি মনে করেন, যেসব দৃশ্য আসল জীবনের সম্পর্ক ও স্নেহের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তা ব্যক্তিগত এবং মর্যাদার বিষয়। তিনি নিজে যেভাবে জীবন যাপন করেন, সেটির সাথে এই ধরনের দৃশ্য মিলিয়ে নিতে পারেন না।

অনেকে মনে করেন, এটি তার ব্যক্তিগত ধর্মীয় ও নৈতিক বিশ্বাসের প্রতিফলন। সালমানের মতে, তিনি পর্দায় ‘ভালোবাসার অনুভূতি’ প্রকাশ করতে চান তবে তা অন্যরকম পদ্ধতিতে — যেমন চোখে চোখে দেখা, আলিঙ্গন, বা অন্য কোনো হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের মাধ্যমে। তাই তিনি দৃঢ়ভাবে পর্দায় চুম্বনের দৃশ্য এড়িয়ে চলেন।

সালমান খান ও নায়িকাদের সম্পর্ক: বাস্তব ও পর্দার ফারাক

বলিউডে সালমান খান বহু নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন, যেমন ঐশ্বরিয়া রাই, ক্যাটরিনা কাইফ, কারিশমা কাপুর, কঙ্গনা রানাউত, দীপিকা পাডুকোন ইত্যাদি। বাস্তব জীবনে তার সম্পর্কের নানা দিক থাকলেও, পর্দায় চুম্বনের দৃশ্য থেকে নিজেকে আলাদা রেখেছেন।

এই বিষয়টি অনেক সময় আলোচিত হয় এবং নানা মিডিয়া-আলোচনার জন্ম দেয়। অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী এই নীতি অনুসরণ না করলেও, সালমানের এই ‘নো কিসিং পলিসি’ তাকে আলাদা করে তুলেছে। এটি তার একটি ব্র্যান্ডিং পয়েন্টেও পরিণত হয়েছে, যা তার ভক্তদের কাছে অত্যন্ত সম্মানজনক।

সালমান খানের নীতি ও বলিউডের পরিবর্তিত সংস্কৃতি

বর্তমান সময়ের বলিউডে চুম্বনের দৃশ্য সাধারণ ব্যাপার হলেও সালমানের মত সুপারস্টারের পক্ষ থেকে এটি বিরল ঘটনা। অনেক তারকা পর্দায় ‘রোমান্টিক দৃশ্য’কে স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করেন। কিন্তু ভাইজান তাঁর ‘পরিবার বান্ধব’ ইমেজ ধরে রাখতে চান, যেটি তার দর্শকদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।

এছাড়া, তার এই নীতি নতুন প্রজন্মের জন্য এক ধরনের উদাহরণ, যারা পারিবারিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা রক্ষা করতে চান। সালমানের ‘নো কিসিং পলিসি’ বলিউডে প্রফেশনালিজম এবং ব্যক্তিগত নীতির সমন্বয়ের একটি অনন্য মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সালমান খানের ‘নো কিসিং পলিসি’ ও ভক্তদের প্রতিক্রিয়া

ভক্তরা সাধারণত সালমানের এই নীতিকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন। তাদের জন্য ভাইজান মানেই স্পর্শকাতর হলেও স্নেহময় এক ছবি, যেখানে তিনি নিজের পরিচিতি ও নৈতিকতার প্রতি অটল। সোশ্যাল মিডিয়ায় সালমানের এই ‘নো কিস পলিসি’ নিয়ে আলোচনা হলেও তাঁকে সমর্থন করে অনেকেই মন্তব্য করেন, এটি তার সাফল্যের কারণগুলোর অন্যতম।

বলিউড সুপারস্টার সালমান খান যেভাবে নিজের অভিনয় এবং ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনা করছেন, তা তাকে অনন্য ও শ্রেষ্ঠ করে তুলেছে। পর্দায় ‘নো কিসিং পলিসি’ তার বিশেষত্ব, যা তাকে ভক্তদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান এনে দিয়েছে। এই নীতির পেছনে ব্যক্তিগত আদর্শ, নৈতিকতা এবং পারিবারিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণ রয়েছে।

সুতরাং, সালমানের পর্দায় চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় না করার কারণ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অস্বস্তি নয়, বরং এটি তার জীবনের নীতি ও দর্শনের একটি প্রকাশ। এভাবেই তিনি তাঁর ‘ভাইজান’ ইমেজ ধরে রেখেছেন এবং ভবিষ্যতেও এই নীতিকে শক্তভাবে পালন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button