রবীন্দ্রসংগীতও এমনভাবে করি যেন জেন-জিরাও শোনে

বাংলা সংগীত জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সুনিধি নায়েক। তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত গান ‘পালাবে কোথায়’ শুধু সুর-লয়ের জন্যই নয়, বরং একটি গভীর সামাজিক বার্তা বহন করে। গানটির মাধ্যমে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন, যা আজকের দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুনিধি নিজেই শেয়ার করেছেন, এই গান তার ব্যক্তিগত জীবনের এক কঠিন সময় থেকে জন্ম নিয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্য: সমাজে অবহেলার একটা বড় জায়গা
সুনিধি নায়েক জানান, প্রায় ছয় বছর আগে তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন—এই বিষয়গুলো তার কাছে খুব ভয়ংকর মনে হয়েছিল, যতক্ষণ না তিনি চিকিৎসা শুরু করেন। তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো মানসিক স্বাস্থ্যও একটি রোগ। চিকিৎসার মাধ্যমে এবং যোগব্যায়াম, মেডিটেশনের সাহায্যে আমরা সহজেই ভালো হতে পারি।”
‘পালাবে কোথায়’ গানের পেছনের গল্প
“এই গানটি তৈরি করেছি মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে,” বললেন সুনিধি। গানটির অডিও তৈরি শুরু হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এবং প্রায় তিন মাস সময় লেগে অডিও সম্পন্ন হয়। এরপর ভিডিও নির্মাণে আরও তিন মাস সময় লেগেছে। গানটির সুর ও সঙ্গীতে পশ্চিমা ইলেকট্রনিক মিউজিকের মিশ্রণ রয়েছে, যা বিশেষ করে জেন-জি শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
সুনিধি বললেন, “আমি চাই সবার জন্য কিছু বিশেষ করে তাদের জন্য যাঁরা মানসিক রোগে ভুগছেন। গানটি যেন তাঁদের কাছে পৌঁছায় এবং ভালো লাগার অনুভূতি দেয়।”
জেন-জিরাও শোনার মতো রবীন্দ্রসংগীত
সুনিধি নায়েকের গানের ভিন্নতা এখানেই, তিনি বলেন, “রবীন্দ্রসংগীতও আমি এমনভাবে করি যেন জেন-জিরাও শোনে। আমি চাই গানগুলো একঘেয়ে বা মনোটোনাস না হয়, বরং সেগুলোতে নতুনত্ব থাকা উচিত।” এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার কাজ অনেক তরুণ প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। তিনি বিশ্বাস করেন, নতুন প্রজন্ম আমাদের ভবিষ্যত এবং তাদের ভালো লাগার মতো শিল্প সৃষ্টি করতে হবে।
অ্যালবাম প্রকাশ ও আন্তর্জাতিক সফর
সুনিধি বর্তমানে একটি রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম সম্পন্ন করেছেন, যা তিনি চার বছর ধরে তৈরি করছেন। তিনি বলেন, “বাইরে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশে শিল্পীদের জন্য এজেন্সির অভাব রয়েছে, তাই নিজে থেকেই সকল কাজ করতে হয়। আমি চেষ্টা করছি অ্যালবামটি দ্রুত প্রকাশের।”
সম্প্রতি সুনিধি যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ডজনখানেক কনসার্ট করেছেন। দুই মাসে ১০ থেকে ১২টি শো করেছে তার টিম। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত দ্রুতগতিতে যাওয়া-আসা করতে হয়েছে, তবুও অভিজ্ঞতাটি ছিল অনবদ্য।
সুনিধি নায়েকের ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক যাত্রা
সুনিধি জানান, ছয় বছর আগে তার মা মারা যাওয়ার পর ডিপ্রেশনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সেই সময় তার কাছে কেউ ছিল না, তিনি একাকীভাবে সময় পার করেছেন। চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন তাকে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তুলেছে। এখন তিনি মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ এবং জীবনে ফিরে আসতে পেরে খুব খুশি।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সুনিধির বার্তা
তিনি উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এমন সকল মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, “ভয় পেতে হবে না, চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করা উচিত নয়। আপনি যত দ্রুত চিকিৎসা নেবেন, তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হবেন।”
সুনিধি নায়েকের ‘পালাবে কোথায়’ শুধু একটি গানের নাম নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার এক চেতনা যা বাংলা সংগীত জগতে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। তার আন্তরিকতা, ব্যক্তিগত সংগ্রাম ও সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাজকে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তুলে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুনিধি নিজেকে এক উজ্জ্বল তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার এই যাত্রা আমরা আগামীতেও দেখতে পাবো নতুন নতুন গান, সামাজিক সচেতনতা এবং আন্তর্জাতিক সঙ্গীত মঞ্চে।