বিনোদন

৮৫ বছর পূর্ণ করলেন মুহাম্মদ ইউনূস

 নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী, ক্ষুদ্রঋণ ধারণার পথিকৃৎ এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ৮৫ বছর পূর্ণ করলেন। নিরহঙ্কার এই অর্থনীতিবিদের জীবন জুড়ে রয়েছে সংগ্রাম, সাফল্য এবং বৈশ্বিক স্বীকৃতির এক উজ্জ্বল ইতিহাস।

জন্মদিনে নিভৃতচারী ইউনূস

আজ ২৮ জুন, ৮৫ বছরে পা দিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৪০ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। যিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণা দিয়ে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, তিনিই এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

জন্মদিনে কোনো জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশের শুভেচ্ছা বার্তা। তার সহকর্মীরা তাকে একজন ‘জীবন্ত অনুপ্রেরণা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন

মুহাম্মদ ইউনূসের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলে। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ৩৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনি ১৬তম স্থান লাভ করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যান। পরবর্তীতে শিক্ষকতা করেন মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে।

গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণের যাত্রা

দেশে ফিরে ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেন এবং সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন পথচলা। ১৯৭৬ সালে জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প শুরু করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, “দারিদ্র্য কোনো ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা।” তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল বর্তমানে ৪০টির বেশি দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে।

শান্তি ও স্বীকৃতির প্রতীক

২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলসহ বিশ্বের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার লাভ করেছেন।

তার গড়া ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণাটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ানো হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান তার নামে বিভাগ খুলেছে, যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।

রাজনীতিতে অনিচ্ছা থেকে দায়িত্ব

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেন মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও দেশের সংকটে জাতীয় দায়িত্ব গ্রহণে পিছপা হননি।

তার বক্তব্য, “দেশের তরুণ প্রজন্ম নতুন দিকনির্দেশনা চায়। আমি কেবল তাদের সহযাত্রী হিসেবে থাকতে চাই।”

‘সামাজিক ব্যবসা দিবস’ ও বার্তা

তার জন্মদিনের ঠিক আগের দিন দেশে পালিত হয়েছে ১৫তম সামাজিক ব্যবসা দিবস। ইউনূস সেন্টার ও গ্রামীণ গ্রুপ যৌথভাবে এই আয়োজন করে। যদিও সেখানে জন্মদিন উদযাপনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, তবে বক্তব্যে ড. ইউনূস সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনতে সামাজিক ব্যবসার ভূমিকার ওপর জোর দেন।

উপসংহার

৮৫ বছরের জীবনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রমাণ করেছেন, একজন মানুষই সমাজ বদলে দিতে পারে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য নিরসনে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অবিস্মরণীয়।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই বয়সেও জাতীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া এই মানুষটি আগামী দিনে কেমন বাংলাদেশ গড়বেন? ইতিহাস এই অধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে।


এম আর এম – ০০৯৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button