নোবেলের কারা ফটকে বিয়ে, দেনমোহর কত?

মাইনুল আহসান নোবেল, গানের জগতে পরিচিত নাম। দীর্ঘ ছয় বছর পেশাদার সংগীতজীবনে নিজের অভিনবতা ও কণ্ঠস্বর দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছেন তিনি। ‘জি বাংলার সারেগামাপা’র মাধ্যমে যার পরিচয় সকলের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তার সংগীত জীবন যেমন আলোচিত, তেমনি বিতর্কেও তিনি কম যান না। ব্যক্তিগত জীবন ও বিভিন্ন বিতর্কিত ঘটনায় প্রায়ই সংবাদ শিরোনামে থাকেন নোবেল।
গান থেকে শুরু করে জীবনযাত্রা—সবকিছুই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এবার তার জীবনে এমন এক ঘটনা ঘটেছে, যা তাকে নতুন করে বিতর্কের তাণ্ডবে ফেলেছে। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নোবেল বর্তমানে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। সম্প্রতি কারা ফটকে সেই নারীর সঙ্গে তাঁর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।
ধর্ষণ মামলার পেছনের গল্প: অভিযোগ, মামলা ও গ্রেপ্তার
গত ২০ মে, ধর্ষণের অভিযোগে নোবেল গ্রেপ্তার হন। অভিযোগকারী ওই নারী টাঙ্গাইলের বাসিন্দা। মামলার বাদী ওই নারী জানিয়েছেন, সাত মাস ধরে তিনি নোবেলের একটানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাকে একটি বাসায় আটকে রেখে বারবার ধর্ষণ ও মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।
নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন দাবি করেছেন, ওই নারী নোবেলের স্ত্রী, তাই ধর্ষণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে আদালতে কাবিননামা জমা দিতে পারেননি নোবেলের পক্ষে কেউ। এই মামলাটি আদালতে তোলা হলেও এখনও সঠিক বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।
আদালতের অনুমতি ও কারা ফটকে বিয়ে
অভিযোগ ও মামলার জটিলতায় যখন নোবেল কারাগারে আছেন, তখনই তার বিয়ের বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার গত বুধবার নোবেলের বিয়ে করার অনুমতি দেন।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাদী ও আসামি উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছেন বিয়ে করার জন্য। এছাড়াও কারাগর কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কারাগারের ফটকে সম্প্রতি নোবেল ও ওই নারীর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন দুই পক্ষের ঘনিষ্ঠজনরা, যেমন নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, খলিলুর রহমান ও সাদেক উল্লাহ ভূঁইয়া।
দেনমোহরের পরিমাণ ও নোবেলের ব্যক্তিগত জীবন
নোবেলের এই বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা, যা বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। এটি নিঃসন্দেহে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে সঙ্গীতাঙ্গন ও সামাজিক মাধ্যমে।
মাইনুল আহসান নোবেলের ব্যক্তিগত জীবনও বেশ বর্ণাঢ্য। ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের এক তরুণীর বিরুদ্ধে প্রথম ধর্ষণের মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এই মামলার রেশ কাটতে না কাটতেই, ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি সালসাবিল মাহমুদকে ভালোবেসে বিয়ে করেন।
তবে সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। নোবেল ও সালসাবিলের মধ্যে নানা বিবাদ ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস নিয়ে কলহ হয়। একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে শিরোনামে আসেন দুজনই। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
নোবেলের সংগীত ও বিতর্কের দ্বৈত জীবনের বিশ্লেষণ
গায়ক হিসেবে নোবেলের কণ্ঠস্বর ও সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগী ভক্ত রয়েছে প্রচুর। তবে তার ব্যক্তিগত জীবন ও মামলার কারণে অনেকেই তাকে সমালোচনা করেন। সংগীতাঙ্গনের একজন প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে নোবেলের সম্ভাবনা কম নয়, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাকে বার বার অগ্রগতি থেকে বিরত রেখেছে।
নোবেলের জীবনের এই দুঃখজনক ঘটনা ও বর্তমান পরিস্থিতি বাংলার সংগীত জগত এবং সামাজিক পরিবেশে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মাইনুল আহসান নোবেলের জীবনে এই নতুন অধ্যায় নিয়ে মানুষ কৌতূহল প্রকাশ করছে। মামলার বিচার ও বিয়ের পরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হবে, তা সময়ই বলবে। তবে এই ঘটনার আলোকে সংগীত ও সামাজিক জীবনের দ্বৈত পরিপ্রেক্ষিত অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আশা করা যায়, নোবেল নিজের জীবনের শিক্ষা নিয়ে আগামীতেও সঙ্গীতের জগতে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং ব্যক্তিগত জীবনে স্থিতিশীলতা অর্জন করবেন।