এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫: কেন্দ্রসচিবদের জন্য শিক্ষা বোর্ডের ৩৩টি কঠোর নির্দেশনা

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫: এবার কঠোর নজরদারিতে অনুষ্ঠিত হবে
২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নকলমুক্ত পরিবেশে আয়োজনের জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ৩৩টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে। কেন্দ্র সচিব এবং সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে এই নির্দেশনাগুলো পাঠানো হয় বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।
পরীক্ষার সময়সূচি ও সিলেবাস
১. চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় সকল পরীক্ষার্থী (নিয়মিত, অনিয়মিত, মানোন্নয়ন) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত ২০২৫ সালের সংশোধিত সিলেবাস অনুযায়ী পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের পরীক্ষা দেবে।
২. পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল ১০টা ও দুপুর ২টা থেকে শুরু হবে।
প্রশ্নপত্র নিরাপত্তা ও পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা
৩. পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৩ দিন আগে ট্রেজারিতে রাখা প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা যাবে। তখন উপস্থিত থাকতে হবে: ট্রেজারি অফিসার, কেন্দ্র সচিব ও পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্য।
৪. প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র সৃজনশীল (CQ) ও বহুনির্বাচনী (MCQ) আলাদা খামে, তারিখ ও সেট অনুযায়ী প্যাকেট করে রাখতে হবে।
৫. প্রশ্নপত্র প্যাকেট খোলার সময় খামের গায়ে তারিখ, বিষয় কোড, সেট কোড স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। কোনো অনিয়ম ঘটলে তা দায়িত্বে অবহেলা বলে গণ্য হবে।
৬. কোনোভাবেই উপজেলা সদরের বাইরে প্রশ্নপত্র রাখা যাবে না।
৭. প্রতিদিনের পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সেটের প্রশ্নপত্রই SMS-এর মাধ্যমে নির্দেশনা অনুযায়ী খোলা ও ব্যবহার করতে হবে। অব্যবহৃত সেট ফেরত দিতে হবে বোর্ডে।
নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা
৮. থানার ট্যাগ অফিসার ও পুলিশের পাহারায় পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে আনতে হবে।
৯. কেন্দ্র সচিব ছাড়া কেউ মোবাইল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। কেন্দ্র সচিব শুধু ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন।
১০. কেন্দ্রে প্রশ্ন বিতরণ, খাম খোলা, পরিবহনসহ প্রতিটি ধাপে ট্যাগ অফিসার থাকতে হবে।
১১. পরীক্ষার হলে কেবল অ্যানালগ (কাঁটাযুক্ত) ঘড়ি ব্যবহার করা যাবে। স্মার্টওয়াচ নিষিদ্ধ।
১২. অনলাইনে পরীক্ষার সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করতে হলে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হবে যাতে কোনো তথ্যফাঁস না ঘটে।
পরীক্ষার্থী ও শিক্ষক ব্যবস্থাপনা
১৩. প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ১ জন করে কক্ষ পরিদর্শক থাকতে হবে। প্রতিটি কক্ষে অন্তত ২ জন থাকবেন।
১৪. পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকক্ষে ঢুকতে হবে। বিলম্বিত পরীক্ষার্থীর নাম, রোল ইত্যাদি রেজিস্টারে লিখে বিশেষ বিবেচনায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে।
১৫. পরীক্ষার দিন কেন্দ্র বা ভেন্যু কেন্দ্রে অন্যান্য ক্লাস স্থগিত থাকবে। তবে অন্যান্য দিনে স্বাভাবিক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলবে।
১৬. পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি হাজিরা শিটে সই নিতে হবে। অনুপস্থিত থাকলে লাল কালি দিয়ে ‘অনুপস্থিত’ লিখতে হবে।
১৭. প্রতিটি বিষয়ের উত্তরপত্র ভিন্ন প্যাকেটে রাখতে হবে। ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা প্রশ্ন ও উত্তরপত্রের প্যাকেট বাধ্যতামূলক।
প্রবেশপত্র ও প্রশাসনিক দায়িত্ব
১৮. কেন্দ্র সচিব নিজ নিজ কলেজের প্রবেশপত্র শিক্ষা বোর্ড থেকে গ্রহণ করে দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রধানদের কাছে পৌঁছে দেবেন।
১৯. প্রবেশপত্রে কোনো ভুল থাকলে তা অবশ্যই পরীক্ষার চার কর্মদিবসের মধ্যে সংশোধন করতে হবে।
২০. নকল প্রতিরোধে বোর্ড থেকে সরবরাহকৃত পোস্টারগুলো পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রবেশপথে দৃশ্যমান স্থানে লাগাতে হবে।
২১. পরীক্ষাকেন্দ্রে জটলা রোধে প্রয়োজনে হ্যান্ড মাইকের ব্যবহার এবং সিসিটিভি স্থাপন করা যেতে পারে।
উত্তরপত্র ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা
২২. বোর্ড থেকে সরবরাহ করা উত্তরপত্র ও ওএমআর শিট সংগ্রহ করে যাচাই করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ খাতা বোর্ডে ফেরত দিতে হবে।
২৩. ৫০টি করে উত্তরপত্র করোগেটেড শিটে প্যাকেট করে বোর্ডে পাঠাতে হবে।
২৪. ব্যবহৃত খাতার ওএমআর ‘টপ শিট’ আলাদা করে বোর্ডে পাঠাতে হবে।
২৫. প্যাকেটে কোনো অতিরিক্ত চিহ্ন বা লেখা থাকলে দায়ভার থাকবে কেন্দ্র সচিবের।
২৬. প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পরিবহনে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সহায়তা নিতে হবে।
২৭. উত্তরপত্র প্যাকেট বোর্ডের স্ক্রিপ্ট রুমে সিলগালা অবস্থায় পৌঁছে দিতে হবে।
বিশেষ নির্দেশনা
২৮. বর্ষাকালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিদ্যুৎ সমস্যা হলে কেন্দ্র সচিবকে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে চিঠি দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
২৯. এমসিকিউ পরীক্ষার পরে সাথে সাথেই CQ প্রশ্ন বিতরণ করতে হবে। কোনো অবস্থায় দেরি করা যাবে না।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জারি করা এই ৩৩ দফা নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হলো প্রশ্নফাঁস, নকল, অব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে এইচএসসি ২০২৫ পরীক্ষাকে সুরক্ষিত রাখা। পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতীয় কার্যক্রমকে সফল করতে শিক্ষক, প্রশাসন, পুলিশ, অভিভাবক এবং পরীক্ষার্থীদের সম্মিলিত সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা নয়, বরং জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আশা করা যায়, সকলের প্রচেষ্টায় একটি সুশৃঙ্খল, নকলমুক্ত ও নিরাপদ পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হবে।