শিক্ষা

পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম ২০২৭, আগেভাগে ছাপা বই নিশ্চিত

সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের শুরুতেই বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার যে ঐতিহ্য ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়েছিল, তা গত কয়েক বছরে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বই বিতরণে ব্যাপক দেরি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। তিন মাস পর, মার্চের শেষদিকে গিয়ে এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সব বিষয়ের বই সরবরাহ সম্পন্ন করতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আগেভাগেই বই ছাপার কাজ শুরু করেছে এনসিটিবি।

আগেভাগেই বই ছাপার উদ্যোগ, দরপত্র আহ্বান শুরু

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্যবই ছাপার কাজ এবার সময়মতো শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহ থেকেই বই ছাপার দরপত্র আহ্বান শুরু হবে। জুন মাসের মধ্যেই সব শ্রেণির বইয়ের দরপত্র কার্যক্রম শেষ করে ছাপার কাজ শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের বই ২৫ অক্টোবরের মধ্যে মাঠপর্যায়ে পৌঁছানোর কথা, আর মাধ্যমিক পর্যায়ের বই পৌঁছাবে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে।

এনসিটিবির রুটিন দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, “গতবারের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই এবার আমরা আগেই কাজ শুরু করেছি। যাতে করে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে পূর্ণাঙ্গ বই তুলে দেওয়া যায়।”

অতিরিক্ত চাহিদা রোধে মাঠপর্যায়ে যাচাই

এবার বইয়ের চাহিদা নির্ধারণে এনসিটিবি আরও সর্তক অবস্থান নিয়েছে। সাধারণত বিদ্যালয়গুলো অতিরিক্ত বইয়ের চাহিদা জানিয়ে দেয়, ফলে বই ছাপাতে সরকারের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এবারে এনসিটিবির কর্মকর্তারা নিজেরা বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করে প্রকৃত চাহিদা যাচাই করছেন। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য ২৩ কোটি ১২ লাখ বইয়ের চাহিদা পাওয়া গেলেও পুনরায় যাচাই করে তা কমিয়ে ২২ কোটিতে আনা হয়েছে। এটি আরও কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রাথমিক স্তরের বইয়ের চাহিদা এখনও নির্ধারণ হয়নি। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৯ কোটি ১৯ লাখ বই ছাপানো হয়েছিল।

শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই পরিমার্জনের অগ্রগতি

২০২২ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করা হয় এবং ২০১২ সালের পুরোনো শিক্ষাক্রম পুনর্বহাল করা হয়।

তবে প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রমই বহাল রাখা হয়েছে এবং ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে সেই অনুযায়ী পরিমার্জিত পাঠ্যবই সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বর্তমান পাঠ্যবইগুলো পরিমার্জনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

২০২৭ সাল থেকে নতুনভাবে পুরো শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের পরিকল্পনা

এনসিটিবি আরও জানিয়েছে, ২০২৭ সাল থেকে পুরো শিক্ষাক্রম আরও আধুনিক ও যুগোপযোগীভাবে পরিমার্জন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে এবং ধাপে ধাপে সব শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এই লক্ষ্যে প্রাথমিক কিছু কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, “আমরা ২০২৭ সাল থেকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা করছি। আপাতত প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে, তবে সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে পুরো প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

সময়মতো বই বিতরণে সরকারি পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ

বছরের প্রথম দিন ‘বই উৎসব’ করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার যে ঐতিহ্য ছিল, তা গত কয়েক বছরে নানা কারণে ব্যাহত হয়েছে। গত বছরগুলোর তুলনায় ২০২৫ সালে বই সরবরাহে অতিরিক্ত দেরি হওয়ায় শিক্ষা বিভাগের ব্যাপক সমালোচনা হয়। এনসিটিবি বই সরবরাহের অনুমোদন (পিডিআই) চূড়ান্ত করতে করতে পৌঁছায় ২৪ মার্চ। ততদিনে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার প্রায় তিন মাস কেটে যায়।

এর পেছনে পাঠ্যবই পরিমার্জন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, টেন্ডার জটিলতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণ থাকলেও পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল বড় দায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠ্যবই ছাপার পয়েন্ট ভিত্তিক সরবরাহ পরিকল্পনা

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বই মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে ৫৮৫টি বিতরণকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি। এসব কেন্দ্রে সময়মতো বই পৌঁছাতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ছাপাখানা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও চিন্তা করা হচ্ছে। এতে করে ভবিষ্যতে বই সরবরাহে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button