শিক্ষা

আলোচনায় সন্তুষ্ট নয় কারিগরি শিক্ষার্থীরা, আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ছয় দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট না হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন দেশের কারিগরি শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াছমিন এর সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনরত কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম।

তিনি জানান, “আজকের বৈঠকে আমরা মন্ত্রণালয়ের কোনো বাস্তব বা দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। কাজেই আমরা এই আলোচনায় সন্তুষ্ট নই। আন্দোলন চলবে, এবং আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবো।”

দীর্ঘ ৮ মাসের আন্দোলন

আরেক ছাত্র প্রতিনিধি জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, “আমাদের আন্দোলন চলছে আট মাস ধরে। কিন্তু এখনো কোনো বাস্তব সমাধান আসেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরাসরি প্রতারণা করেছে। যিনি বৈঠকে আমাদের সঙ্গে বসেছেন, তিনিও জানতেন না, শিক্ষা উপদেষ্টা উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অযৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে কেবল সময় নষ্ট করা হয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের ৬ দফা প্রধান দাবি

১. ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিল: হাইকোর্টের রায় অনুসারে এই পদোন্নতি বাতিল, বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল ও সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে।
২. ভর্তির বয়সসীমা নির্ধারণ: যেকোনো বয়সে ভর্তি বাতিল, মানসম্পন্ন চার বছর মেয়াদি কারিকুলাম ও ইংরেজি মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে হবে।
৩. সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের যথাযথ পদে নিয়োগ: উপসহকারী প্রকৌশলী পদে সংরক্ষিত কোটা বাস্তবায়ন ও নিয়োগে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টরে অপ্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ বন্ধ: পরিচালনা পর্ষদের সব পদে কারিগরি শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং শূন্যপদে দক্ষ শিক্ষক-ল্যাব সহকারী নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন: দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. উচ্চশিক্ষার সুযোগ: টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চারটি নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অস্থায়ী ক্যাম্পাস খুলে আগামী সেশন থেকেই শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতা

গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে ঢাকার সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। সারাদেশে জেলা পর্যায়েও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে সংহতি জানান তারা।

পরে বিকেলে সেখানে গিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শোয়াইব আহমাদ খান শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি মানার আশ্বাস দিলেও, শিক্ষার্থীরা লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া আন্দোলন থেকে সরে আসেননি।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে রেলপথ অবরোধঅসহযোগ আন্দোলন চালাবেন। তবে, সরকারের শীর্ষপর্যায়ের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি কিছুটা শিথিল করে আলোচনায় বসেন।

শিক্ষার্থীদের অবস্থান

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের দাবি, সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত লিখিত পদক্ষেপ ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তা না হলে, আরও তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে তারা দাবি আদায়ে মাঠে থাকবেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button