শিক্ষা

ভুয়া পাঠাগার খুঁজে বের করে বাদ দেওয়া হবে: ফারুকী

Advertisement

আগামী অর্থ বছরের আগে বেসরকারি ভুয়া পাঠাগারগুলো খুঁজে বের করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে সরকারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের সিনেপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে গ্রন্থাগার অধিদপ্তর। এই দিবসটির উদ্দেশ্য ছিল গ্রন্থাগারের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা।

ভুয়া পাঠাগার বিষয়ক ফারুকীর বক্তব্য:

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, ‘‘পাবলিক লাইব্রেরির কার্যক্রমের দিকে এর আগে গভীর মনযোগ দেওয়া হয়নি। পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে, কিন্তু এগুলোর ডিজিটালাইজেশন নিয়ে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা এখনই এটি করার সময় পেয়েছি, ই-বুকের কাজ চলছে এবং এই কার্যক্রমটি আরও গোছালোভাবে করতে হবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘যত দ্রুত আমরা পাবলিক লাইব্রেরি ডিজিটালাইজেশন কাজ সম্পন্ন করতে পারব, তত দ্রুত বিশ্বের বড় বড় লাইব্রেরির সঙ্গে সমন্বয় করতে পারব। তখন জ্ঞানের ভাণ্ডারটা আমরা অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারব।’’

এছাড়া, ভুয়া পাঠাগার সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সরকারি পাঠাগারের বাইরে যেসব বেসরকারি পাঠাগার রয়েছে, পাড়া-মহল্লাভিত্তিক, এই পাঠাগারগুলোতে ব্যাপকহারে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা এমন জায়গাগুলো খুঁজে পেয়েছি, যেখানে লাইব্রেরি বলে কিছুই নেই, কিন্তু তাতে ৭-৮ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছে।’’

মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী আরো বলেন, ‘‘এভাবে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা তাদের কাছের লোকদের কাছে এই অনুদানগুলো প্রদান করেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ খুব কম, কিন্তু ভুয়া পাঠাগারগুলোর জন্য তারা সত্যিকারের পাঠাগারের অনুদানগুলো কম পাচ্ছে।’’

তিনি জানান, আগামী অর্থ বছরের আগে এই ভুয়া পাঠাগারগুলো খুঁজে বের করার জন্য তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং তাদের বাদ দেওয়ার জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ‘‘আমাদের সার্ভে অনুযায়ী সত্যিকারের পাঠাগারের সংখ্যা ৫০০-৬০০টি। আমরা চাই এটি আরও ভালোভাবে তদন্ত করা হোক এবং ভুয়া পাঠাগারের সংখ্যা কমিয়ে আনা হোক। এতে সত্যিকারের পাঠাগারগুলো আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবে।’’

পাঠাগারের ভবিষ্যৎ ও জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস:

এ সময় ফিজিক্যাল গ্রন্থাগারগুলোর গুরুত্বেও জোর দেওয়া হয়। মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, ‘‘গ্রন্থাগার শুধু বইয়ের সংগ্রহ নয়, এটি একটি সামাজিক কেন্দ্রও হতে পারে, যেখানে মানুষ নতুন নতুন তথ্য জানতে এবং শিখতে পারে।’’

সংবাদ সম্মেলনে গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনীষ চাকমা বলেন, ‘‘আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ উদযাপিত হবে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সমৃদ্ধ হোক গ্রন্থাগার, এই আমাদের অঙ্গীকার’।’’

তিনি জানান, ‘‘এ দিন দেশের জনগণকে গ্রন্থাগারমুখী করার জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি ও মননশীল সমাজ গঠনে লাইব্রেরির ভূমিকা শক্তিশালী করা হবে।’’

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে, যেখানে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হবে, যার উদ্দেশ্য গ্রন্থাগারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি করা।

পাঠাগার দিবসের অনুষ্ঠান:

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী, এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম। মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আলম।

এ সময় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘‘এ বছর জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস সফল করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে এটি উদযাপন করা হবে।’’

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ:

এছাড়া জেলা প্রশাসন, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি, বাংলাদেশ গ্রন্থাগারিক ও তথ্যায়নবিদ সমিতি, বেসরকারি গণগ্রন্থাগার সমিতি, বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পেশাজীবী, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একযোগে দিবসটি পালন করবে।

উপসংহার:

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য শুধু পাঠাগারের সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং সেগুলোর মান বাড়িয়ে পাঠক সমাজকে আরও সমৃদ্ধ ও সচেতন করে তোলা। ফারুকীর মন্তব্য অনুযায়ী, একদিকে যেখানে পাঠাগারের সংখ্যা বাড়ানোর কাজ চলছে, সেখানে অন্যদিকে ভুয়া পাঠাগারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগের মাধ্যমে সত্যিকারের পাঠাগারের জন্য আরও বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। এটি দেশের পাঠাগার ব্যবস্থার উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button