শিক্ষা

আপত্তির মুখে প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা, সংগীতের শিক্ষক পদ বাতিল

Advertisement

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত এবং শারীরিক শিক্ষার জন্য নতুনভাবে সৃষ্ট সহকারী শিক্ষক পদ বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার (২ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত সংশোধিত গেজেট জারি করেছে।

গত আগস্টে প্রকাশিত ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫’-এ এই দুটি নতুন পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের আপত্তির পর সরকার এই পদ দুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নতুন পদ বাতিলের কারণ

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৫৯-এর উপধারা (১) অনুযায়ী এবং সংবিধানের ১৪০(২) অনুচ্ছেদের বিধান মেনে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই পদ দুটি বাতিল করা হয়েছে।

সংশোধিত বিধিমালায় এখন শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ ও যোগ্যতার নিয়ম রয়েছে। সহকারী শিক্ষক (সংগীত) ও সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) পদের নিয়োগ সংক্রান্ত অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।

আগের বিধিমালা ও পদ সৃষ্টি

আগস্টে প্রকাশিত প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় মোট চারটি পদ উল্লেখ করা হয়েছিল—প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক (সংগীত), এবং সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা)। নতুন পদগুলো সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার মান উন্নয়ন করা।

তবে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন এবং শিক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষকরা এই পদ সৃষ্টির বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেন। তারা যুক্তি দেখান যে, প্রাথমিক স্তরে এই দুটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজনীয়তা যথেষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি এবং এটি বাজেট ও প্রশাসনিক জটিলতা বাড়াবে।

সংশোধিত বিধিমালার বিস্তারিত

সংশোধিত বিধিমালায় তফসিল-১ (বিধি-২-এর গ) এবং বিধি ৭-এর উপবিধি (২)-এর দফা (খ) পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেখানে ‘অন্যান্য’ শব্দটি পরিবর্তন করে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রার্থীগণের দ্বারা মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগযোগ্য’ করা হয়েছে।

এই সংশোধন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের মান বজায় রাখতে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

নতুন পদ বাতিলের ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার মান কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে। তবে মন্ত্রণালয় মনে করছে, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া সম্ভব।

শিক্ষক সমিতি ও প্রাথমিক শিক্ষাবিদরা বলছেন, ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার জন্য স্বল্পকালীন কোচ বা বিশেষ প্রশিক্ষক নিয়োগ করা যেতে পারে।

ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো পদ বাতিলকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, এটি শিক্ষাব্যবস্থায় কৃত্রিম পদ সৃষ্টি ও প্রশাসনিক জটিলতা কমাবে।

বিশ্লেষক মতামত

শিক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাথমিক স্তরে এই পদ দুটি বাতিল করা শিক্ষা খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। বরং এটি সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

তাদের মতে, ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয়, সরকার কেবল সংশ্লিষ্ট কোর্স ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া, শারীরিক ও সংগীত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বিকল্প পাঠক্রমের মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রয়োজনীয় হলে এই দুই বিষয়ে বিশেষ কোচ বা কর্মশালা পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মান বজায় রাখা হবে।

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, নতুন নিয়োগ বিধিমালার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং দক্ষ হবে। শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারি কর্ম কমিশনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

এম আর এম – ২০৬৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button