শিক্ষা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিতুমীর শিক্ষার্থীরা

ঢাকা: সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি, সোমবার সন্ধ্যায় তিতুমীর কলেজের ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি ছিল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

এ সভায় তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষসহ তিন অধ্যাপক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এবং গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১২ শিক্ষার্থী বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন, যাতে সরকার তাদের দাবি পূরণে সহায়তা করে।

আন্দোলনের পটভূমি

কয়েক মাস ধরেই তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে— শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আরও উন্নয়ন ও বিশ্বমানের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য এটি একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা উচিত। এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন, যেমন— মিছিল, সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, এবং ক্লাস বর্জন।

এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে গত জানুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রণালয় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করার জন্য। তবে, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের এই দাবির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় ২৯ জানুয়ারি থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করেন। পরবর্তীতে, ৩০ জানুয়ারি থেকে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু হয়, যার ফলে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয় এবং যাত্রীদের মধ্যে চরম ভোগান্তি দেখা দেয়।

রেলপথ অবরোধ

এছাড়া, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে মহাখালীতে রেলপথ অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে রেলপথে দাঁড়িয়ে অবস্থান নেন, যার ফলে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি থামিয়ে দেওয়া হয়। ট্রেনটির লোকোমাস্টার আব্দুল লতিফ জানান, তারা রেলপথ অবরোধের ঘটনা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেনটি মহাখালী রেলগেটের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর থামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর, ট্রেনটি তেজগাঁও রেলস্টেশনে ফেরত নেওয়া হয়।

এই ধরনের আন্দোলন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছে, যা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির গুরুত্ব

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কলেজের উন্নয়ন এবং স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, যদি তিতুমীর কলেজকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হয়, তবে এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ করবে এবং উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করবে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় তিতুমীর কলেজের অবস্থান উপযুক্ত এবং এ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীদের দাবি শুধু শিক্ষার উন্নয়ন নয়, এটি তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরিরও সুযোগ হবে। তারা সরকারের কাছে আশা করছেন, এই দাবি দ্রুত পূরণ করা হবে এবং তিতুমীর কলেজ দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একে নতুন দৃষ্টিতে উপস্থাপন করবে।

তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা কি সম্ভব?

তিতুমীর কলেজের বর্তমান কাঠামো, শিক্ষার মান, এবং সামাজিক গুরুত্ব বিবেচনা করলে এর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের বিষয়টি সম্ভব। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানে সরকারের কাছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। তবে, তিতুমীরকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা বিষয়টি প্রক্রিয়া সাপেক্ষে হতে পারে এবং এর জন্য যথাযথ পরিকল্পনা, বাজেট এবং অবকাঠামোগত প্রস্তুতি প্রয়োজন।

তবে, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে, এই দাবি বাস্তবায়ন হতে পারে এবং তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবে।

প্রতিবাদী আন্দোলন এবং এর প্রভাব

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ইতোমধ্যেই জাতীয় সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাড়া ফেলেছে। তাদের আন্দোলন কেবল শিক্ষা ব্যবস্থা এবং কলেজের উন্নয়ন নিয়ে নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবেও গণ্য হতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছেন, যা তাদের একাগ্রতা এবং তিতুমীর কলেজের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন।

এদিকে, সরকারি পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ায়, এটি একটি বড় ধরনের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। একদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছেন, অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটি এখন দেখার বিষয়।

ভবিষ্যত কি হবে?

যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি এখনও চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আশা করছেন যে তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। এদিকে, আন্দোলনটি যদি অব্যাহত থাকে এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও জোরালো হতে পারে। এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত তিতুমীর কলেজকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হলে, এটি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button