শিক্ষা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় কীটনাশক খেয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

Advertisement

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর টিএন্ডটি পাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সোমাইকাণ্ড ঘটেছে—উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় ফেল হওয়ার খবর পেয়ে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। নিহত ছাত্রীর নাম চাঁদনী আক্তার (১৭)। পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, ফল প্রকাশের পর তিনি দুই বিষয়ে ফেল করার খবর জানতে পেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে কীটনাশক সেবন করেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

পরিবারের বর্ণনা ও আইনী প্রক্রিয়া

নিহত চাঁদনীর পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের চুন্টা গ্রামের মো. ফারুক মিয়ার মেয়ে। তার বাবা রিকশা চালক। মামা আতিকুল ইসলাম বলেন, ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদনী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং পরবর্তীতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম (ওসি) ঘটনার প্রাথমিক তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো তদন্ত চলছে; প্রয়োজন হলে ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে বিস্তারিত জানানো হবে।

হাসপাতালে চিকিৎসা ও ফুলে-ধরা পরিস্থিতি

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাঁদনীকে দ্রুত স্থানীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসকরা তাকে উদ্ধারকল্পে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করলেও সন্ধ্যার মধ্যে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, আক্রান্তের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তৎকালীন চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যায়নি; হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়।

পরীক্ষার চাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের সংকট

শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল প্রকাশের দিনগুলোতে এমন সংকটজনক ঘটনা আগে থেকেই ধরা পড়ছে—পাশাপাশি পরীক্ষার চাপ, সামাজিক প্রত্যাশা ও আর্থসামাজিক দুরবস্থা তরুণদের ওপর অতিরিক্ত মানসিক বোঝা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে পরিবার ও কমিউনিটির উচ্চ প্রত্যাশা, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ফলাফলের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কিছু ক্ষেত্রে সঙ্কটকে তীব্র করে তোলে।

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ফলাফলের সঙ্গে মানসিক সহায়তা সেগমেন্টকে বাধ্যতামূলক করা উচিত। কলেজ-মাধ্যমিক পর্যায়ে কাউন্সেলিং সেবা, শিক্ষক-পিতামাতার সচেতনতা কর্মসূচি এবং জরুরি মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কয়েক দফায় উত্থাপিত হচ্ছে।

সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়বোধ

স্থানীয় শিক্ষক ও কলেজ প্রশাসন ঘটনার জন্য শোক প্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চাপ কিভাবে হালকা করা যায় এবং ফল প্রকাশের সময় কিভাবে সহানুভূতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়—এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, বিশেষ করে প্রত্যন্ত ও নিম্নআয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় খারাপ ফল হলে অতিরিক্ত চাপের ঝুঁকিতে থাকে। এজন্য বিদ্যালয়-কলেজ পর্যায়ে নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ছাত্রকল্যাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি।

বিশেষজ্ঞ মতামত

মানসিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার প্রতিকূল ফলাফল মানসিকভাবে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে — তবে তা মোকাবিলার উপায় এবং সহায়তার পথ থাকা উচিত। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন—পরিবার, শিক্ষক, ও বন্ধুবৃন্দকে প্রথমে সংবেদনশীলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে; বিকল্প পথ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রেরণা জোগাতে হবে; এবং তাত্ক্ষণিকভাবে মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য পেশাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করা উচিত।

কী করা উচিত: প্রতিরোধ ও সহায়তা

ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা নিম্নোক্ত কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছেন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং চালু করা, পরীক্ষার ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের জন্য সহানুভূতিশীল ও গোপনীয়ভাবে ফল জানানো, পরিবারের মধ্যে চাপ কমানো ও বিকল্প শিক্ষামূলক পথ সম্পর্কে জানানো, এবং জরুরি সময় মানসিক সেবা পাওয়া যায় এমন ব্যবস্থা থাকা।

মনোযোগের আহ্বান

চাঁদনীর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু শিক্ষাব্যবস্থার একটি শোকাবহ সতর্কবার্তা। পরীক্ষার ফল এক শিক্ষার্থীর জীবনের মাপকাঠি নয়—অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে সমগ্র সমাজকে সহানুভূতিশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারগুলোকে মিলিয়ে তরুণদের জন্য দ্রুত সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা পরিকল্পনা করতে হবে।

আপনাদের কাছে অনুরোধ: যদি আপনার পরিচিত কারো মধ্যে মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ঝুঁকি লক্ষ করেন, দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কলেজ প্রশাসন বা পরিবারকে জানান এবং পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের ব্যবস্থা করুন। জরুরি অবস্থায় নিকটস্থ হাসপাতাল বা ডাক্তারকে জানানোর বিষয়টি কখনো বিলম্ব করবেন না।

এম আর এম – ১৮১৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button