শিক্ষা

এইচএসসিতে ২০২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী ফেল

Advertisement

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার শূন্য। এই ফলাফল দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান ও শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় দেশের সকল শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। একই সঙ্গে, রাজধানীর বকশিবাজারে অবস্থিত আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য উন্মোচন করে।

শতভাগ ফেল, আগের বছরের তুলনায় তিন গুণ বেশি

সারাদেশে এবার শতভাগ পাস করেছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৪৫টি। আর শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ২০২টি, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ১৩৭টি বেশি। ২০২৪ সালে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৫টি।

পাশের হারও এ বছর বড় ধরনের হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের গড় পাসের হার ছিল ৭৭.৭৮ শতাংশ। এবারে তা কমে হয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ, যা শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭৮ হাজার কমেছে।

বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে, পাসের ক্ষেত্রে নারীরা ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে। ছেলেদের চেয়ে ৫৯,২৩২ জন বেশি নারী শিক্ষার্থী পাস করেছে। এছাড়াও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা ৪,৯৯১ জন বেশি।

শিক্ষার মান ও শিক্ষক নিয়োগে ঘাটতি

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন ফলাফলের পেছনে রয়েছে শিক্ষার মানহীনতা, শিক্ষকের সংখ্যা ও যোগ্যতার ঘাটতি, এবং পাঠ্যক্রমের প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগের অভাব। দেশের অনেক বিদ্যালয় ও কলেজে মৌলিক শিক্ষার মান এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।

এছাড়াও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি মনোযোগ ও দায়িত্বশীলতার অভাবও এই ফলাফলের জন্য একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করেনি, পরীক্ষা-প্রস্তুতি যথাযথভাবে করেনি।

‘বাস্তব মূল্যায়ন’ নীতিতে ফল প্রকাশ

এ বছরও ফলাফলের হিসাব তৈরি করা হয়েছে ‘বাস্তব মূল্যায়ন’ নীতিতে। বাস্তব মূল্যায়ন নীতির উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর প্রকৃত জ্ঞান ও দক্ষতা পরিমাপ করা। ফলে, শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের নির্ভুল মূল্যায়ন সম্ভব হয়েছে। তবে, শতভাগ ফেল হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞানও অপর্যাপ্ত।

পরীক্ষার পরিসংখ্যান

২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১২,৫১,১১১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেন। এর মধ্যে ছাত্র ছিল ৬,১৮,০১৫ জন এবং ছাত্রী ছিল ৬,৩৩,০৯৬ জন।

পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২,৭৯৭টি কেন্দ্রে। তবে, প্রায় ২৭,০০০ শিক্ষার্থী কোনো কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।

শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য করণীয়

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ বাড়ানো, পাঠ্যক্রম আধুনিকীকরণ, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, এবং মানসম্মত শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ অপরিহার্য।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর উচিত শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত পরীক্ষা, প্রকল্প, ও কর্মশালার ব্যবস্থা করা। এছাড়া শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অনলাইন ও অফলাইন শিক্ষার সমন্বয় এবং শিক্ষার্থী মনোবল বৃদ্ধির জন্য কার্যক্রম চালু করা দরকার।

প্রায় ২০ বছরের তুলনা

এ ধরনের কম পাশের হার ২০০৫ সালের পর থেকে খুবই কম দেখা গেছে। ২০০৫ সালের পর থেকে শিক্ষার মান ও পাশের হার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এবারের ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, এখনও অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর মানসম্পন্ন শিক্ষার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ।

শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

পরীক্ষায় ফলাফল ভালো না হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, হতাশ না হয়ে আবার নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নেওয়া। পুনঃপরীক্ষা বা অন্যান্য শিক্ষাগত বিকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। অভিভাবকদেরও উচিত শিক্ষার্থীদের মানসিক সমর্থন এবং শিখন প্রক্রিয়ায় সহায়তা প্রদান করা।

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারী উদ্যোগ

সরকারি পক্ষও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন এবং শিক্ষার্থীর মৌলিক জ্ঞান যাচাইয়ের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তবে, শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়, কলেজ, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীর যৌথ প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল দেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ২০২টি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস না হওয়া এবং গড় পাশের হার হ্রাস শিক্ষার মান উন্নয়নে তৎপর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে।

শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এবং দেশের মানসম্মত মানবসম্পদ গঠনের জন্য শিক্ষার মান নিশ্চিত করা এখন সময়োপযোগী এবং জরুরি।

MAH – 13344 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button