শিক্ষা

এইচএসসি ফল প্রকাশ, ৩৪৫ প্রতিষ্ঠানের শতভাগ সাফল্য।

Advertisement

বাংলাদেশে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার ৩৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। তবে, ২০২৪ সালের তুলনায় এই সংখ্যা কমেছে। গত বছর শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান ছিল ১৩৮৮টি। অর্থাৎ এক বছরে শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান কমেছে ১ হাজার ৪৩টি।

ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকা বোর্ডের সভাকক্ষে বাংলাদেশ আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ঢাকার বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির উপস্থিত থেকে ফলাফলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাংবাদিকদের জানান।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ও পাসের হার

এবার মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ এবং ছাত্র সংখ্যা ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫।

ফলাফলের হিসাব অনুযায়ী, ১১টি শিক্ষাবোর্ডে গড় পাসের হার হয়েছে ৫৮.৮৩ শতাংশ। এর অর্থ, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও কম শিক্ষার্থী পাশ করেছে। তবে শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমলেও, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান remarkable ফলাফল করেছে।

শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের সাফল্য

তথ্য অনুযায়ী, ৩৪৫টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাস করেছে। এটি শিক্ষার্থীদের, শিক্ষকদের এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক যৌথ সাফল্য। শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরকারি, বেসরকারি এবং মাদ্রাসা সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এদিকে ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল যেখানে কোনো শিক্ষার্থী পাশ করতে পারেনি। এটি শিক্ষাবোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষকের দায়িত্বশীল ভূমিকা এই ধরনের ফলাফলের পার্থক্য তৈরি করে।

পরীক্ষার প্রস্তুতি ও শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগে শিক্ষার্থীরা কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিল। করোনার পরবর্তী সময়ে অনলাইন ও অফলাইন শিক্ষার মিশ্রণ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার মান এবং প্রস্তুতির সুযোগ সবসময় সমান হয় না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের সাফল্যের জন্য পরিবারের সহায়তা, মানসম্মত কোচিং, স্কুলের পর্যাপ্ত রিসোর্স এবং সময়মতো পাঠদানের গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষাবোর্ডের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ঢাকা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষাবোর্ড এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের পর শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য নতুন পদক্ষেপ নেবে। বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য নিয়মিত নিরীক্ষণ চালানো হবে।

প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা শুধু পাশ করুক না, বরং তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নত হোক। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই সমন্বয় অপরিহার্য।”

পাসের হার ও শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের বিশ্লেষণ

এবারের পরীক্ষায় ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩% হলেও বোর্ড অনুযায়ী পার্থক্য দেখা গেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট, কুমিল্লা, দুমকুড়া ও দিনাজপুর বোর্ডে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স ভিন্ন ভিন্ন।

বিশেষ করে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বোর্ডের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভালো ফলাফল করেছে। তবে, কিছু বোর্ডে শিক্ষার্থীদের পাসের হার অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় কম। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষার মান এবং পরীক্ষা প্রস্তুতির সুযোগের অসমতা এই পার্থক্য তৈরি করছে।

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ও মতামত

ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী আনন্দিত কারণ তারা ভালো ফলাফল করেছে, আবার কিছু শিক্ষার্থী হতাশ কারণ তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পায়নি।

এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমার লক্ষ্য ছিল উচ্চ নম্বর পাওয়া। কিছু বিষয় ভালো হয়নি, তবুও মোটামুটি সন্তুষ্ট।” অন্যদিকে একজন ছাত্রী বলেন, “শতভাগ পরিশ্রম সত্ত্বেও আমি ভালো ফল পাইনি। তবে এই ফল আমাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা।”

শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, নতুন শিক্ষণ প্রযুক্তি ব্যবহার, এবং শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত কোচিং অপরিহার্য।

তারা আরও বলেন, “শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং এটি শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীর বাস্তব পারফরম্যান্সের একটি প্রমাণ। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র শিক্ষার্থীকে পাশ করানো নয়, বরং তাদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা।”

শিক্ষার্থীদের পরামর্শ

  • নিয়মিত অধ্যয়ন ও পরিকল্পিত প্রস্তুতি
  • শিক্ষক ও সহপাঠীর সহায়তা গ্রহণ
  • অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যম ব্যবহার
  • সময়মতো বিশ্রাম এবং মানসিক প্রস্তুতি
  • পরীক্ষার ধরন ও প্রশ্নপত্রের ধারা বুঝে প্রস্তুতি

এই সব পরামর্শ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পেতে সহায়ক হতে পারে।

২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান কমেছে, তবে শিক্ষার্থীদের গড় পাসের হার এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের বিশেষ সাফল্য আশা জাগাচ্ছে। শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা উন্নয়নে বোর্ড ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমশ উন্নতি করছে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ, শিক্ষকের পরিশ্রম এবং প্রযুক্তির ব্যবহার মিলিত হয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো ফলাফল নিশ্চিত করবে।

MAH – 13342 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button