শিক্ষা

এইচএসসি রেজাল্ট প্রকাশ, অপেক্ষার অবসান ১২ লাখ শিক্ষার্থীর।

Advertisement

অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে দেশের সোয়া ১২ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর। আজ বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ সকালে একযোগে প্রকাশ করা হবে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। সকাল ১০টা থেকেই অনলাইনে এবং মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমে জানা যাবে ফলাফল।

কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ফল প্রকাশ

প্রতিবছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এইচএসসি ফলাফল প্রকাশ করা হলেও এবারও সেই ধারা থাকছে না। আগের বছরের মতো এবারও সরাসরি কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ও কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে ফলাফল।

বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির জানিয়েছেন, “বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দেশের সব শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফলাফল প্রকাশ করবে। ফলাফল জানতে শিক্ষার্থীরা অনলাইন, এসএমএস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— এই তিন উপায়ে ফলাফল জানতে পারবে।”

ফলাফল জানার ৩টি সহজ উপায়

১️⃣ অনলাইনে ফলাফল দেখুন:
শিক্ষার্থীরা www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে বোর্ডের নাম, রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ফলাফল জানতে পারবে। এছাড়া, প্রতিটি বোর্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও ফলাফল পাওয়া যাবে।

২️⃣ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে:
প্রত্যেক পরীক্ষাকেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফলাফলের প্রিন্ট কপি পাওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বোর্ডের নির্ধারিত পদ্ধতিতে লগইন করে পুরো প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ডাউনলোড করতে পারবেন।

৩️⃣ এসএমএসের মাধ্যমে:
মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখতে হবে —
HSC <স্পেস> বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল <স্পেস> বছর
তারপর পাঠাতে হবে 16222 নম্বরে।

উদাহরণস্বরূপ:
HSC DHA 123456 2025
এই মেসেজ পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে রিপ্লাই মেসেজে।

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষা

২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড — ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর এবং ময়মনসিংহ; একটি মাদ্রাসা বোর্ড এবং একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

প্রতিটি বোর্ড নিজস্ব উদ্যোগে ফলাফল প্রকাশ করবে। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে একত্রিত ফলাফল পাওয়া যাবে।

কতজন অংশ নিয়েছে এইচএসসি ২০২৫ পরীক্ষায়?

এ বছর মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছিল। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন ছাত্রী

সারা দেশে মোট ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এই পরীক্ষা। তবে বিভিন্ন কারণে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি

কবে ও কীভাবে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করবেন?

ফলাফলে সন্তুষ্ট না হলে শিক্ষার্থীরা চাইলে পুনর্নিরীক্ষণের (Re-scrutiny) আবেদন করতে পারবে। আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১৭ অক্টোবর থেকে এবং চলবে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত

এ বছরের মতো আগের বছরগুলোর মতোই আবেদন করা যাবে শুধুমাত্র অনলাইনে। আবেদন করতে হবে ওয়েবসাইটে —
https://rescrutiny.eduboardresults.gov.bd

বোর্ডে বা অন্য কোনো অফিসে সরাসরি আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ফল প্রকাশের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও স্বয়ংক্রিয়। এক্ষেত্রে মানুষের ত্রুটির সুযোগ খুবই কম। পরীক্ষার পর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী, এরপর স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার দিয়ে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়।

এছাড়া, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য, বোর্ড ও রোল নম্বর নিরাপদ রাখতে বিশেষ সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ফলাফল প্রকাশের আগে শিক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা

দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা ও তাদের পরিবারগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অনেকেই রাতেই ফল জানার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কেউ কেউ প্রার্থনা করেছেন ভালো ফলাফলের আশায়, আবার অনেকে আত্মবিশ্বাসী নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে।

ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “সারাবছর অনেক কষ্ট করেছি, এখন শুধু ভালো ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। সকালে ফল দেখব, আল্লাহ যেন মুখে হাসি ফোটান।”

বোর্ড চেয়ারম্যানের বার্তা

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা যেন আত্মবিশ্বাস হারায় না— সেটিই সবচেয়ে জরুরি। কেউ যদি প্রত্যাশিত ফল না পায়, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভবিষ্যতে আরও সুযোগ আছে।”

তিনি আরও জানান, “ফলাফল প্রকাশের পর সকাল ১০টায় বোর্ডের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।”

ফলাফলের পর শিক্ষার্থীদের পরবর্তী করণীয়

ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় চিন্তা হবে ভর্তি নিয়ে। দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, প্রকৌশল ও অনার্স কলেজগুলোতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে শিগগিরই।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন শুরু হতে পারে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেই। ফলে শিক্ষার্থীদের দ্রুত তাদের ফল যাচাই করে নেওয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

শিক্ষাবিদদের মতে, এইচএসসি ফলাফল শিক্ষার্থীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। তবে শুধুমাত্র গ্রেড নয়, শেখার মান, দক্ষতা ও বাস্তবজ্ঞানও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষা বিশ্লেষক ড. মাহবুব হোসেন বলেন, “আমাদের উচিত এখন ফলের সংখ্যার বাইরে গিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে ভাবা। কারণ শুধু ভালো গ্রেড পেলেই জীবনে সফল হওয়া যায় না, দরকার বাস্তব জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা।”

আগের বছরের তুলনায় পরিবর্তন কী?

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮৫.৯৫ শতাংশ। এবারও বোর্ড কর্মকর্তারা আশাবাদী যে ফলাফল আরও ভালো হবে, কারণ পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও উত্তরপত্রের মান তুলনামূলক উন্নত ছিল।

তবে কিছু বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে ফল কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

  • ফলাফল প্রকাশের পর ওয়েবসাইটে চাপ বেশি থাকায় ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে হবে।
  • ফলাফল ডাউনলোড করে সংরক্ষণ রাখুন, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরির ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
  • ফলাফল প্রত্যাশিত না হলে হতাশ না হয়ে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করুন।
  • ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে এখনই ভাবুন — কোন বিষয়ে পড়তে চান, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে লক্ষ্য রাখবেন।

আজকের দিনটি বাংলাদেশের লাখো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য এক আবেগময় দিন। ১২ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী তাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল জানতে পারবে আজ সকাল ১০টায়। কেউ হয়তো হাসবে আনন্দে, কেউ হয়তো একটু হতাশ হবে, কিন্তু এটাই জীবনের অংশ।

ফলাফল ভালো হোক বা মন্দ — শিক্ষা যাত্রা থেমে থাকবে না। বরং এই ফলাফলই হবে নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে অপেক্ষা করছে আরও বড় স্বপ্ন ও সম্ভাবনা।

MAH – 13335 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button