শিক্ষা

র‍্যাগ দেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা, জাবির ১৬ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

Advertisement

 জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ১৬ শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা পুরো ঘটনার তদন্ত করে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবারও র‍্যাগিংয়ের ঘটনা সামনে এসেছে। প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ১৬ শিক্ষার্থীকে র‍্যাগ দেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোববার (১২ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর ছাত্র হলের একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঘটনার বিস্তারিত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাত ১১টার দিকে ২১ নম্বর ছাত্র হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের ১৬ জন শিক্ষার্থী তাদের বিভাগের সর্বকনিষ্ঠ ৫৪তম ব্যাচের ২০ জন নবীন শিক্ষার্থীকে কক্ষে ডেকে নেন। পরে আলো ও দরজা-জানালা বন্ধ করে নবীনদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রহরীরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের হাতেনাতে ধরে প্রশাসনকে জানায়। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “আমরা ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছি। পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

র‍্যাগিং নিষেধাজ্ঞা

র‍্যাগিং বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহু বছর ধরেই একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতীতে একাধিকবার র‍্যাগিং বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে এবং কঠোর নির্দেশনাও জারি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, যেকোনো র‍্যাগিং কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে এবং এর জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে—যার মধ্যে বহিষ্কার অন্যতম।

এর আগেও জাবিতে ২০১৯ ও ২০২২ সালে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। প্রশাসনের কঠোর মনোভাব থাকা সত্ত্বেও বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং-বিরোধী সেল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু), এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে।

জাকসুর অ্যান্টি র‍্যাগিং সেলের একজন সদস্য বলেন, “এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি। আশা করি তদন্তে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।”

অন্যদিকে, অনেক শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, র‍্যাগিংয়ের সংস্কৃতি পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বিভাগীয় শিক্ষক ও সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হতে হবে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

বাংলাদেশে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই র‍্যাগিং রোধে বিশেষ নীতিমালা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৬০টিরও বেশি র‍্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ২০টির বেশি ঘটনায় শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালেও একই ধরণের একটি ঘটনা ঘটে, যেখানে ছয়জন শিক্ষার্থী সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়েছিল। এবারের ঘটনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রশাসনের শাস্তিমূলক অবস্থান আরও কঠোর হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

শিক্ষাবিদ ও মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, র‍্যাগিংয়ের মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতির বিকৃত প্রতিফলন। সিনিয়রদের মধ্যে অনেকেই র‍্যাগিংকে “একটি ঐতিহ্য” হিসেবে দেখে, যা নতুনদের উপর মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টি করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “র‍্যাগিং শুধু শৃঙ্খলাভঙ্গ নয়, এটি শিক্ষার্থীর মানসিক সুস্থতার উপর আঘাত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যান্টি র‍্যাগিং নীতি থাকলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নজরদারি দুর্বল।”

তিনি আরও বলেন, “যখন প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, তখন সেটি অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করে। কিন্তু ধারাবাহিক নজরদারি না থাকলে র‍্যাগিং আবার মাথা তোলে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগ দেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা নিঃসন্দেহে প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপের একটি উদাহরণ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ব্যবস্থা তখনই কার্যকর হবে যখন তা ধারাবাহিক হবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে এবং র‍্যাগিংবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করে, তাহলে হয়তো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।

এম আর এম – ১৭৫৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button