
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে বড় ধরনের ত্রাস সৃষ্টি করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশীদ মামুনের আজীবন বহিষ্কার।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের ভিত্তিতে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিদ্ধান্তের বিস্তারিত
গতকাল, রবিবার রাতে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশীদ মামুনকে সাংগঠনিক পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। এছাড়া, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মামুনের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বহিষ্কারের পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
শিক্ষা ও রাজনীতির মিশ্রণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘর্ষ নতুন নয়। তবে, এই বহিষ্কার ঘোষণা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি চাকসু নির্বাচনের ঠিক দুই দিন আগে এসেছে।
ছাত্রদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে মামুনের অনুসারী নেতা-কর্মীরা দলীয় প্যানেলে স্থান না পাওয়ায় কিছু স্বতন্ত্র পদে সমর্থন দিয়েছেন। সূত্রটির দাবি, এই কারণে মামুনকে সাংগঠনিকভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মামুন নিজের দায়বদ্ধতা অনুযায়ী কিছু কর্মীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, যা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাতের সৃষ্টি করেছে।
মামুনকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
ছাত্রদলের শাখা কমিটির ইতিহাস
২০২৩ সালের ১১ আগস্ট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চবি শাখার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করা হয়।
নতুন কমিটিতে নিম্নলিখিত দায়িত্ব বিন্যাস করা হয়েছিল:
- সভাপতি: মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসিন
- সাধারণ সম্পাদক: আব্দুল্লাহ আল নোমান
- সিনিয়র সহসভাপতি: মোহাম্মদ মামুন উর রশীদ মামুন
- সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: মো. ইয়াসিন
- সাংগঠনিক সম্পাদক: মো. সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়
দুই বছরের মেয়াদের জন্য কমিটি অনুমোদিত হলেও, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি।
চবি রাজনীতিতে ছাত্রদলের প্রভাব
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ন। চাকসু নির্বাচনের সময়, ছাত্রদলের শাখা কমিটি এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সংঘাত প্রায়ই নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
- শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
- নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও চ্যালেঞ্জ
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন
এই সমস্ত কারণে, মামুনের বহিষ্কার শুধু একটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি চাকসু নির্বাচনের ফলাফলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
নির্বাচনের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
চাকসু নির্বাচন ২০২৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মাইলফলক। প্রাথমিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামুনের বহিষ্কার নির্বাচনে ছাত্রদলের ভেতরের সংঘাতকে আরও তীব্র করবে।
- দলীয় সমর্থনের পুনর্বিন্যাস
- স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নতুন নেতা সমর্থনের প্রবণতা
- শিক্ষার্থীদের ভোটের প্যাটার্নে পরিবর্তন
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি সবসময় শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা ও নেতৃত্ব বিকাশের মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে, কখনও কখনও রাজনৈতিক সংঘাত শিক্ষা পরিবেশে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বহিষ্কৃত নেতা ও দলের পরবর্তী পদক্ষেপ
মোহাম্মদ মামুন উর রশীদ মামুনকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।
এছাড়া, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, মামুনের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ বা সহযোগিতা করা যাবে না।
এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে ছাত্রদল চাইছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত কমানো।
চবি শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত ছাত্ররাজনীতিতে একটি বড় ইঙ্গিত।
কিছু শিক্ষার্থী মনে করছেন, ছাত্রদলের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এ ধরনের পদক্ষেপ জরুরি। আবার অনেকে বলছেন, নির্বাচনের ঠিক আগে এমন সিদ্ধান্তে ভোটের পরিবেশ প্রভাবিত হতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে ছাত্রদলের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী। তবে, মো. মামুন উর রশীদ মামুনের আজীবন বহিষ্কার শুধুমাত্র একজন নেতার নয়, বরং পুরো ছাত্রদলের শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব এবং নির্বাচনী কৌশলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
চাকসু নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে এই ঘটনা শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক মহলের মধ্যে উত্তেজনা, আলোচনা ও বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
শুধু এখন নয়, ভবিষ্যতেও এই সিদ্ধান্ত চবি ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
MAH – 13304 I Signalbd.com