
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ. ন. ম. এহসানুল হক মিলন বলেছেন, দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকের সব শাখায় ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ইসলামি শিক্ষার পাঠক্রমে মৌখিক পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
শনিবার (১১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইসলামিক স্টাডিজ ফোরাম আয়োজিত ‘সংকট আবর্তে ইসলাম শিক্ষা: উত্তরণ কর্মকৌশল’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বৈঠকে প্রফেসর ড. এ. কে. এম. ওয়ারেসুল করিম বুলবুল, প্রফেসর ড. আবু জাফর খান, প্রফেসর মিয়া মুহাম্মদ নুরুল হক, ড. মো. রইছ উদ্দিন, ড. ছিদ্দিকুর রহমান আশরাফী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান শিক্ষানীতিতে সমস্যা
সভায় বক্তারা জানান, বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে শিক্ষানীতিতে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’কে যথাযথভাবে আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উৎস থেকে ধর্মশিক্ষা গ্রহণ করছে, যা ভুল ব্যাখ্যা ও কুসংস্কারের সৃষ্টি করছে।
বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ধর্ম ও নৈতিকতা বিষয়ে অজ্ঞ হওয়ায় সমাজ ও রাষ্ট্রে অনৈতিকতার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। বক্তারা মনে করেন, শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্তি একান্ত জরুরি।
বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা
বক্তারা আরও বলেন, ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ভর্তি নীতিমালায় ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি এখনও ঐচ্ছিক (চতুর্থ বিষয়) হিসেবে রাখা হয়েছে। এটি সেক্যুলার নীতির পুনরাবৃত্তি। সমাজ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দাবি, মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা- সব শাখায় ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক।
প্রফেসর আতিকুর রহমান বলেন, “যুব সমাজের মানসিকতা ও নৈতিক মান বৃদ্ধির জন্য ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এটি শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব
ইসলাম শিক্ষা শুধু ধর্মীয় দিকেই নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের উন্নয়নে সাহায্য করে। সভায় বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নিয়মিত নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে, তবে তা সামগ্রিকভাবে দেশের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।
ড. আবু জাফর খান বলেন, “এটি কেবল শিক্ষার বিষয় নয়, এটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য একটি মৌলিক দায়িত্ব।”
বিশেষজ্ঞ মতামত
গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশের শিক্ষানীতি ও ধর্ম শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করেন। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের উন্নয়ন ছাড়া সমাজে সুশাসন ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
ড. মো. রইছ উদ্দিন বলেন, “ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থীদের নৈতিক দিক বিকশিত হয় না। তাই উচ্চ মাধ্যমিকে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা সময়ের দাবি।”
সম্ভাব্য প্রভাব
বক্তারা আশা করছেন, শিক্ষানীতি সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল পাঠ্যবিষয়েই দক্ষ হবে না, বরং নৈতিক ও সামাজিক দিকেও দায়িত্বশীল হবে। এতে ভবিষ্যতে সমাজে অপরাধ ও অনৈতিকতার হার কমে আসবে।
ড. ছিদ্দিকুর রহমান আশরাফী বলেন, “যুব সমাজের চরিত্র গঠন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির জন্য এটি একান্ত প্রয়োজন।”
গোলটেবিল বৈঠকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শিক্ষার প্রতিটি স্তরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে তা দেশের সামাজিক, নৈতিক ও শিক্ষাগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষানীতি সংশোধনের মাধ্যমে নবপ্রজন্মকে ধর্মনিষ্ঠ ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।
এম আর এম – ১৭২৪,Signalbd.com